দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে থাকা সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া দলটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলো। সবশেষ ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর শাসনক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ।
সরকারে থেকে জনগণকে শাসনের চেয়ে শোষণ নির্যাতনই বেশি করেছে দলটি। জুলাই মাসজুড়ে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকারের পতন হলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
এরপরই জনগণের ক্ষোভের আগুনে জ্বলে ওঠে পুরো দেশ। ঢাকায় আওয়ামী লীগের যতগুলো কার্যালয় রয়েছে সবগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। চলে লুটপাট, আগুনে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে দেওয়া হয়।
ঢাকায় আওয়ামী লীগের ৩ টি বড় অফিস। গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় ও তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়।
গণঅভ্যুত্থানের দেড় মাস পরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরোপুরি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে অফিসগুলো। বিদ্ধস্ত অফিসগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই মাত্র কদিন আগেই এগুলো ছিলো সুসজ্জিত আধুনিক স্থাপনা।
গুলিস্তানে ১০ তলাবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে থেকেই ধ্বংসযজ্ঞের ছাপ চোখে পড়ে। গেট দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে প্রকট গন্ধে ঢোকা সম্ভব হয় নি। সুসজ্জিত ভবনের সকল মালামাল লুট করা হয়েছে। পোড়া দেয়ালগুলো ছাড়া কোনোকিছুই অবশিষ্ট নেই। স্টিলের তৈরি নামফলকগুলোও খুলে নিয়ে গেছে মানুষ। লুটপাটের পরে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পূর্ব পাশের ভবনটিও।
বিদ্ধস্ত ভবনটি এখন আশেপাশের মানুষ মলমূত্র ত্যাগের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছে। উপরের দিকের ফ্লোরগুলো মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। নেশাখোর ও টোকাই শ্রেণীর কিছু মানুষের আনাগোনা দেখা যায়।
একই অবস্থা ধানমন্ডি ৩/এ তে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের। মূল অফিসের সামনের গেট কাঠ দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।পাশাপাশি ৩ টি ভবন পুড়ে জীর্নশীর্ন অবস্থায় রয়েছে। ভেতরে প্রবেশ করে ধ্বংসস্তুপ অতিক্রম করে উপরে ওঠা সম্ভব হয় নি। দেখে মনে হবে ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরনো ভয়ার্ত কোনো জনপদ। এখানেও মানুষের মলমূত্রের প্রকট গন্ধ।
মূল সড়কের পাশের প্রথম ভবনটি আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই- য়ের কার্যালয় ছিলো। এ ভবনটিও পুরোপুরি বিদ্ধস্ত হয়ে গেছে। এখানেও মাদকসেবিদের আনাগোনার ছাপ স্পষ্ট।
তবে, কিছুটা ভিন্ন অবস্থা দেখা গেছে তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের। বর্তমানে কিছুটা সুরক্ষিত অবস্থায় আছে এ কার্যালয়টি। একজন গার্ড দায়িত্ব পালন করছে, বাইরের গেটগুলো তালা মেরে রেখেছে। কিন্তু ভেতরের অবস্থা অন্য অফিসগুলোর মতোই। লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগের কারণে শুধু ধ্বংসাবশেষ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে বছরখানেক আগে উদ্বোধন হওয়া সুসজ্জিত এ কার্যালয়টি।
এসব বিষয় নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অনাগ্রহ অধিকাংশ মানুষের। কেউ কেউ বলছেন, পাপের শাস্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে, কিন্তু এমন জ্বালাও পোড়াও করা ঠিক হয় নি, এগুলো দেশের সম্পদ।
তবে, অধিকাংশ মানুষ মনে করছেন– গত ১৬ বছর ধরে জনগণের ওপর চালানো নির্যাতন, নিষ্পেষণ, শোষণ বঞ্চনার ফলস্বরূপ ক্ষোভের আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়গুলো।