রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং অথোরিটি (ডিন, সিন্ডিকেট) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ ডিসেম্বর। নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী ও প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সংগঠন হলুদ প্যানেলের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। দলীয় মনোনয়নের বাইরে গিয়ে একাধিক শিক্ষক স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আর এই দলের বিভক্তির ফলে ভোটে পরাজয়ের আশংকা করছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা।
স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বলছেন ‘দলের নীতিনির্ধারকদের কিছু ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে নিজেদের কাছের প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছেন। তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে নিয়োগ বাণিজ্য করতে চাচ্ছে।
অপরদিকে হলুদ দলের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতেই প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কিছু ব্যক্তির নিজস্ব ক্ষোভ বা মনোনয়ন না পাওয়ার জায়গা থেকে প্রার্থী হয়েছেন।
হলুদ দল সূত্রে জানা যায়, দল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি পদে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হবিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর ওমর ফারুক সরকারকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী।
এছাড়া সিন্ডিকেট নির্বাচনে হলুদ দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন, সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান টুটুল, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হাসান মাহমুদ, সহযোগী অধ্যাপক খালিদ বিন ফেরদৌস (ডিউক), ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুইরেন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাকিবুল ইসলাম নিরব এবং পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রিজু আহমেদ।
আর দলের মনোনয়ন না পেয়ে সিন্ডিকেট নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রহমতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হাসনা হেনা, অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোলাইমান চৌধুরী, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানজিল ভূঞা।
ডিন নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, অধ্যাপক মিজানুর রহমান খান, অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, অধ্যাপক নাসিমা আখতার , অধ্যাপক এ এস এম কামারুজ্জামান, অধ্যাপক এস এম এক্রাম উল্লাহ, অধ্যাপক যুগোল কুমার সরকার, অধ্যাপক বিমল কুমার প্রামানিক, অধ্যাপক মোস্তফা শরীর আনোয়ার, অধ্যাপক মজিবুল হক আজাদ খান, অধ্যাপক এ এইচ এম সেলিম রেজা, অধ্যাপক মো. আবদুস সামাদ ও অধ্যাপক জালালুদ্দিন সরদার।
অপরদিকে ডিন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম , অধ্যাপক আমিনুল হক, অধ্যাপক ড. আরিফুর রহমান, অধ্যাপক রোকানুজ্জামান, অধ্যাপক ফজলুল করিম, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী ও সহযোগী অধ্যাপক রাইসুল ইসলাম।
সিন্ডিকেট নির্বাচনে সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটগরিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা সহযোগী অধ্যাপক সোলায়মান চৌধুরী বলেন, দলের কিছু ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে শিক্ষক নিয়োগে আঞ্চলিক প্রাধান্য ও অনিয়ম করতে চাচ্ছে। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলীয় অঙ্গীকার, জেষ্ঠ্যতা ও নায্যতাকে উপেক্ষা করে ‘পকেট কমিটির’ মতো প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে। অধিকতর যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ‘আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িকতার’ ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।’
শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, দলের সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচনের কথা বলা হলেও সেটা করা হয়নি। দলে কোনো অবদান নেই এমন শিক্ষকদেরও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ননের ক্ষেত্রে কার বাড়ি কোথায়, কে কোন ডিপার্টমেন্টের সেটা দেখা হয়েছে। মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আঞ্চলিকতার ভিত্তিতে। এটা একটা প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের চেতনার পরিপন্থী। আমি এসবের প্রতিবাদে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীপন্থী এক শিক্ষক বলেন, দলের এই দ্বন্দ্ব শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে তেমন প্রভাব ফেলবে না। তবে সিন্ডিকেট নির্বাচনে কিছু ক্যাটগরিতে পরাজয়ের আশংকা থেকে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দলে কোনো বিভক্তি নেই। কিছু শিক্ষক ব্যক্তিগত ক্ষোভ, মনোনয়ন না পাওয়া থেকে প্রার্থী হয়েছেন। এটা এর আগেও হয়েছে। এটা দলে বিভক্তির প্রকাশ নয় ব্যক্তি মানুষের অসন্তোষের প্রকাশ। যাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
মীর কাদির
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়