সম্প্রতি বাংলাদেশ একটি ভয়াবহ বন্যায় চরম ক্ষয়ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছে। যার রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশের লক্ষীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লার বাসীন্দারা। এরই মধ্যে আবার ভাসছে দেশের তিস্তা পাড়ের মানুষ। রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের চরাঞ্চল ছাড়াও কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি যে বন্যায় দেশ ডুবেছিল সেটির পেছনে অন্যতম কারণ ছিল ত্রিপুরার ডম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট বা ডম্বুর গেট খুলে দিয়েছিল ভারত। কারণ হিসেবে ভারত বলেছিল তাদের ত্রিপুরাকে রক্ষা করতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এবারে তিস্তা পাড়ের মানুষ যে বন্যার সম্মুখীন হলো তার পেছনেও অনেকাংশে ভারতই দায়ী। বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় তিস্তা নদীর পানি এমনিতেই বাড়ছে। এর মাঝে দুই দফায় গজলডোবা বাঁধ দিয়ে প্রায় ১১ হাজার কিউমেক পানি ছেড়েছে ভারত। বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আগে থেকে তাদের কিছু জানা ছিল না। পানি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সেচ দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের মতো ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলায়ও গত তিনদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে তিস্তা নদীর ভারতের অংশের বেশ কয়েকটি জায়গায় পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে এবং বাঁধের পানি ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ওই পানি বের করার জন্য এক পর্যায়ে আরও গেট খুলতে হয়েছে।
আমাদের জন্য এটাই তিস্তা বিপর্যয়। এটা জীবন-মরণের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তিস্তা পাড়ের কোটি কোটি মানুষের জন্য। বারবার কোনো আগাম সংকেত ছাড়াই বাঁধগুলো খুলে দেয়া কি ভারতের তরফ থেকে বন্ধুত্বের পরিচয় দেয়? প্রতিবেশী দেশ হিসেবে সাহায্য না করে বরং বিভিন্ন দিক দিয়ে শুধু নিত্যনতুন সমস্যা তৈরির উপাদান ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ভারতের একান্ত বন্ধুপ্রতিম সরকার তিন-তিনবার ক্ষমতায় এসেছিল। তবুও তিস্তা পুনরুজ্জীবন করার মহাপরিকল্পনা নিয়ে বহু চেষ্টা-তদবির আলোর মুখ দেখেনি। তিস্তা পাড়ের মানুষ অনেকটা আশ্বস্ত হয়ে দিন গুজরান করার পর শেষ পর্যন্ত চরম হতাশার মধ্যে ডুবে গেছে।
এমতাবস্থায় তাহলে তিস্তার পানি সমস্যার সমাধান কী করে হবে সেটি ভাবতে হবে। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে আমার অংশের তিস্তা দিয়ে আমি কী করতে পারি– সেটাই এখন দেখার বিষয়। কারণ বর্ষায় বারবার স্লুইসগেট ছেড়ে দেওয়া বন্যা, আশ্বিনে বন্যা, চৈত্রে বন্যা আর সহ্য করার মতো নয়।