কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় সাবেক ভিসি হাসিবুর রশিদকে দায়ী করেছেন সহকারী অধ্যাপক আপেল মাহমুদ। এ বিষয়ে তার আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়েছে।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ছাত্র আন্দোলনসহ নানা বিষয় ওই স্ট্যাটাসে তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক আপেল মাহমুদ।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘ফেসবুকে অনেক দিন লেখালেখি করি না এবং লেখালেখি থেকে অফ থাকতে চাই। ফেসবুকে লেখালেখি এবং গং পলিটিক্স বাদ দিয়ে গবেষণায় কতটুকু অবদান রাখতে পেরেছি, তার প্রমাণ স্বরূপ আমার রিসার্চ প্রোফাইল শেয়ার করলাম এবং শুধু আমাদের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আজ এতটুকু লিখলাম।’
তিনি লেখেন, ‘বেরোবিতে চাকরিকাল ১৬ বছর হতে যাচ্ছে, কিন্তু অধ্যাপক (যেখানে ১১-১২ বছরে অনেকেই অধ্যাপক হয়) পদে পদোন্নতি পাইনি। স্বেচ্ছাচারী উপাচার্য এবং তাদের দোসরদের দুর্নীতি-অনিয়মের প্রতিবাদ করায় প্রমোশন আটকে রাখা হয়েছে। একবার সাময়িক বহিষ্কার হয়েছিলাম, ভিসির দেয়া মামলায় ফৌজদারি আসামি হয়েছি। অসংখ্য শোকজ খেয়েছি। ক্লোজ গ্রুপেও কিছু লিখলে তার স্ক্রিনশট চলে যেতো ভিসি এবং তার পালিত গুণ্ডাদের হাতে। একপর্যায়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি বন্ধ করে দিলাম, প্রতিবাদ করা বাদ দিয়ে একেবারে একা হয়ে গেলাম। ক্যাম্পাসে ক্লাস নেওয়া, টুকটাক গবেষণায় মনোনিবেশ করলাম। তবুও চিরচেনা শত্রুদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি। গত ১৬ বছর যারা নানাবিধ দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়ম করে এসেছে; তারা এখনো ক্যাম্পাস দখলে রাখতে যার তার নামে অপবাদ দিয়ে আসছে। খুনি হাসিব রশিদ গংদের মারাত্মক পরিকল্পনা ছিল!’
তিনি আরও লেখেন, ‘দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পাওয়ার জন্য তিনি যেকোনো মূল্যে তার সমালোচকদের দমন করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বেছে নেন। তার নীল নকশা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, পরিচালক বহিরাঙ্গণ ও প্রভোস্টরা ছাত্রদের পাশে ছিলেন না। আমি ব্যক্তিগতভাবে আশায় ছিলাম শিক্ষক সমিতি বা নীল হলুদ গোলাপী সংগঠন শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে কোনো কর্মসূচি দিবে। কিন্তু তারা আমাদের হতাশ করেছে। তবুও গুটিকয়েক শিক্ষক যে সকল কর্মসূচি দিয়েছিলেন, সেখানে উপস্থিত থেকে প্রতিবাদে সামিল হয়েছি। খুনি হাসিব রশিদ এবং তার দোসররা বহিরাগত মাস্তান-ক্যাডারদের নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর লেলিয়ে দেন এবং যেকোনো সহিংসতার দায়ভার তার সমালোচক এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও তাদের সমর্থনকারী শিক্ষকদের ওপর চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। খুনি হাসিবুর রশীদের হীন কৌশলে পরাস্ত হয়ে আমাদের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হয় এবং সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। তিনি যে মামলা দায়ের করেছিলেন সেটা পর্যালোচনা করলে সকলেই বুঝতে পারবেন।’
পরিশেষে আত্মসমালোচনা করে তিনি লেখেন, পেশাজীবী সংগঠনে যুক্ত ছিলাম; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি অনুযায়ী নীল-হলুদ-গোলাপি দলে অন্তর্ভুক্ত হতে হয়, হয়েছিলাম। কিন্তু, এসব পরিচয়ে কোনো প্রভাব বিস্তার বা অনৈতিক কোনো সুবিধা নিয়েছি কেউ বলতে পারবেন না। প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ওন করি, যথাসাধ্য চেষ্টা করি পড়ালেখা, পাঠদান এবং গবেষণায় নিয়োজিত থাকতে। যাদের আমি পাঠদান করিয়েছি বা গবেষণা-তত্ত্বাবধায়ক ছিলাম তাদের কোনো অভিযোগ আছে বলে জানি না। কোনো শিক্ষার্থী আমার দ্বারা প্রতারিত হয়েছে বা হয়রানি হয়েছে, এমন কোনো অভিযোগ আমার জানা নেই। তবুও কোনো ভুলভ্রান্তি হলে মহান আল্লাহতালার কাছে করুণা প্রার্থী।
সামনের দিনগুলোতে ক্যাম্পাসে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ হোক, আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী সকলে তার প্রাপ্য অধিকার যথাসময়ে পান, দুর্নীতি-নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ হোক, শিক্ষার্থীদের জন্য সেশনজট মুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস হোক বেরোবি।
আরএ//