ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) ছাত্র সংগঠনের হুমকিতে ড. বি আর আম্বেদকর স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভা বন্ধ করে দিয়েছে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ বা আইআইএসইআর।
উগ্র হিন্দুত্ববাদী ডানপন্থী ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ বা এবিভিপি অভিযোগ তোলে, ওই বৈঠকে অতিবাম দলের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে। এরপরই আইআইএসইআর ওই সভা বাতিল করে।
ড. বি আর আম্বেদকরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মুক্তিপর্ব কর্মসূচির অংশ হিসেবে আইআইএসইআর ক্যাম্পাসে শনিবার ও রবিবার শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী দীপালি সালভে, নাজিমা পারভিন ও স্মিতা এম পাটিলের বক্তব্য রাখার কথা ছিল।
মুক্তিপর্বকে ইচ্ছাকৃত ও খামখেয়ালি ভাবে বাতিল করায় ছাত্র পরিষদ এক বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, “ড. বি আর আম্বেদকরের কাজকে সম্মান জানাতে মুক্তিপর্ব উৎসব আয়োজন করা হয়। ধারাবাহিক নিপীড়নের যে কাঠামো রয়েছে তার বিরুদ্ধে ছিল সভা। অজ্ঞাত কারণে প্রতিষ্ঠান এই উৎসব মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়।”
ছাত্র পরিষদ আরও বলেছে, “গোটা দেশে সাম্প্রতিক নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র সংগঠনের উপর যে ধরনের সেনসরশিপ করা হচ্ছে তা আমরা পর্যালোচনা করতে চাই। সকল বিদ্যায়তনিক প্রতিষ্ঠানে কর্তৃত্ববাদী হস্তক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে। বহিরাগত সংস্থা বা সরকার জোর করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চাইছে। প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনের এই ধরনের প্রবণতাকে একযোগে নিন্দা জানাচ্ছি আমরা এবং এই চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা নিঃশর্ত ভাবে সংহতি জানাচ্ছি। কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে দাঁড়াতে আমরা আইআইএসইআর পরিবারের সকল সদস্যকে আহ্বান করছি।”
প্রতিষ্ঠানটি তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “ছাত্র-পরিচালিত উদ্যোগ মুক্তিপর্বের অংশ হিসেবে এই আলোচনা সভার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং এতে অংশগ্রহণ করেন বাইরের বক্তারা যাঁরা সামাজিক সাম্য, জাতপাত ও লিঙ্গ বিষয়ে গবেষক ও বিশেষজ্ঞ। ছাত্র ও শিক্ষকসহ সংগঠকরা সমস্ত প্রক্রিয়া ও নিয়ম মেনেছেন এবং তাঁরা নিশ্চিত করেন যে, এই অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু আপত্তিকর হবে না। তবে, বিবিধ উদ্বেগের কথা মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত আলোচনা সভা এগিয়ে না নিয়ে যেতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
তারা আরও বলেন, “ড. বি আর আম্বেদকরের তুলে ধরা মূল্যবোধের প্রতি আইআইএসইআর দায়বদ্ধ—শুধুমাত্র আম্বেদকর জয়ন্তী উৎসবের সময় নয়, বরং সারা বছর।”
গোটা দেশে এই সেন্সরশিপ ও ছাত্রদের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছাত্ররা দলিত-আদিবাসী-বহুজন পড়ুয়া ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলিকে আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, দেশের সেরা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামান্য একটি সভা নিয়ে এবিভিপি ও ক্ষমতাসীন দল হুমকি দিয়েছে।
তাঁদের বিবৃতিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, “ব্রাহ্মণ ও উচ্চবর্ণ পুরুষদের সংগঠন এবিভিপির কাছে আমরা জানতে চাই, আম্বেদকর ও আম্বেদকর জয়ন্তী কীভাবে উদযাপন করবে দলিত-আদিবাসী-বহুজন, তা বলে দেওয়ার তোমরা কে? এবিভিপি ও শাসক শ্রেণি চায়, তারা দলিত ও আদিবাসী শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রাখবে, কিন্তু তা হবে না। আমরা প্রতিরোধ করব।”