জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক ড.আসিফ নজরুল। ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। একটা সময় আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসনে তিনি। আন্দোলন চলাকালে শহীদ মিনারের সমাবেশে ছাত্র-জনতা ’হিরো হিরো’ ধ্বনিতে সম্মানিত করে তাকে। সেই আন্দোলন এক সময় জনতার একদফা সরকার পতনের দাবিতে পরিণত হলে,গত ৫ই আগস্ট সাবেক সরকার প্রধান শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালালে ৮ই আগস্ট ড.মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান করে অন্তরবর্তী সরকার গঠিত হয়। সেখানে ড. আসিফ নজরুলকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে অতীতে সরকারের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট করা কিছু স্ট্যাটাস নিয়ে আলোচনা সমালোচনায় ভাসছেন এই উপদেষ্টা।
অন্তরবর্তী সরকার গঠনের পরপরই ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে শোক দিবসের ছুটি বাতিল করা হয় এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে হামলার শিকার হয় অনেকেই। তখনই সামনে আসে ২০২৩ সালের ২২শে আগস্ট আসিফ নজরুলের ফেসবুক থেকে পোস্ট করা একটি স্ট্যাটাস। যাতে তিনি লিখেছিলেন–
”শোক প্রকাশের স্বাধীনতা চাই!
কার মৃত্যুতে কে দু:খিত হবে এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। কার দু:খে কে দু:খ পাবে বা কার জন্য কে দোয়া করবে এটাও একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।
এর উপর কোনরকম রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ হতে পারে না।
শোক প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতেই হবে।”
যেটি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করে মনে করিয়ে দেন অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন। যিনি সম্পর্কে আসিফ নজরুলের শাশুড়ি।
তার কিছুদিন পরই এই উপদেষ্টার ফেসবুক থেকে প্রকাশিত আগের আরেকটি স্ট্যাটাস জনতার সামনে আসে। যেখানে তিনি সংসদ সদস্যদের অতিরিক্ত সুবিধা নিয়ে কথা বলেছেন। তবে সেসব সুবিধা এখন তিনিও ভোগ করছেন। এ বিষয়ে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা যেমন গণপরিবহনে চলাচল করে তেমন তিনিও চান। তবে না পারার কারণ হিসেবে জানিয়েছেন তিনি চতুর্দিক থেকে নানা ধরণের হুমকি পাচ্ছেন। যার ফলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তিনি এসব সরকারি সুবিধা ভোগ করছেন।
সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া আরো একটি ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায় – আমি যদি কখনো মন্ত্রী হই তবে মানুষের মন জয় করার জন্য সর্বোচ্চ কাজ করব, কারন মানুষের মন জয় করলে আল্লাহর মন জয় করা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় এ ভিডিও শেয়ার দিয়েও নেটিজেনরা নানারকম নেতিবাচক মন্তব্য করছেন।
সম্প্রতি যেই ইস্যুটি সবচেয়ে আলোচিত সেটি হলো ভারতে ইলিশ রপ্তানি। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে যখন ভারতে ইলিশ রপ্তানি হত সেটি নিয়েও ড.আসিফ নজরুলের , ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের পুরাতন একটি স্ট্যাটাস পাওয়া গিয়েছে, যেখানে তিনি কঠোর সমালোচনা করে লিখেছিলেন ‘‘৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ! বিপুল পরিমাণে ইলিশ ভারতে রপ্তানী করে তাদের কেন খুশী করা হচ্ছে? সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষ মেরে ফেলার জন্য? অভিন্ন নদীর পানি থেকে আমাদের বঞ্চিত করার জন্য? বাণিজ্য ভারসাম্য না রাখার জন্য? কথায় কথায় বাংলাদেশ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য?’’
এদিকে প্রথমদিকে এ সরকার ইলিশ রপ্তানির বিপক্ষে থাকলেও পরে দূর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে তিন হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নেটিজেনদের দাবি, ক্ষমতার বলয়ের বাইরে থাকায় ড.আসিফ নজরুল একসময় ক্ষমতাধরদের যেসব সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন, সেই একই ঘটনার পূনরাবৃত্তিতে এখন অনেকটা নীরবতা পালন করছেন।