প্রতিবছর ঈদের আগে শিল্প এলাকাগুলোয় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা দেখা গেলেও, চলতি বছরে তা ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছাতে পারে। কারণ, সাম্প্রতিক গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান অসন্তোষ এখনো পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি। এই পটভূমিতে সম্ভাব্য উত্তেজনা মোকাবিলায় শিল্পাঞ্চলভিত্তিক কারখানাগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে শিল্প পুলিশ।
সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, আসন্ন ঈদুল আজহার আগে যেসব কারখানা সময়মতো বেতন ও বোনাস দিতে ব্যর্থ হতে পারে, এমন ১৯৮টি কারখানাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই তথ্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির এক সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে অগ্রগতি আলোচনা হয়েছে।
শিল্প পুলিশের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চিহ্নিত এসব কারখানার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ৬৯টি, বিকেএমইএর সদস্য ২২টি এবং বিটিএমএভুক্ত রয়েছে ২৪টি। এছাড়া বেপজার আওতাধীন ১২টি এবং কোনো সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন ৭১টি কারখানাও রয়েছে তালিকায়।
শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে মালিকপক্ষকে ঈদের আগে কোনো ধরনের শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফ ঘোষণার বিরুদ্ধেও সতর্ক করা হয়েছে। একই সঙ্গে, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না হলে সম্ভাব্য অস্থিরতা প্রতিরোধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো এবং পুলিশের মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
শিল্প পুলিশের অ্যাডিশনাল ইন্সপেক্টর জেনারেল গাজী জসীম উদ্দিন জানান, “কারখানা মালিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বাস্তবায়নে কাজ করছি। ছুটির বিষয়টিও নজরে রাখা হচ্ছে।”
বর্তমানে দেশের আটটি শিল্প এলাকায় প্রায় ৯,৬০০টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারখানা গাজীপুরে (২,১৭৬টি) এবং আশুলিয়ায় (১,৮৬৩টি)। চট্টগ্রামে ১,৭৩৫টি, নারায়ণগঞ্জে ১,৮০৬টি, খুলনায় ৭৬৭টি, কুমিল্লায় ৩১৬টি, ময়মনসিংহে ২৮৪টি এবং সিলেটে রয়েছে ৭৪৮টি কারখানা।
গত ১৯ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত ঈদ সংক্রান্ত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, “৩ জুনের মধ্যে সব শ্রমিককে মে মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস দিতে হবে। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি অবশ্যই মানতে হবে। তবে অযৌক্তিক দাবিতে সড়কে নামলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”