বাংলাদেশের রাজনীতিতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নাম আজীবন অক্ষত থাকবে। ক্ষমতার পালাবদলে এরশাদ এক্স ফ্যাক্টর ছিলেন। সামরিক শাসক থেকে পুরোদস্তুর রাজনৈতিক বনে যাওয়া ব্যাক্তিদের অন্যতম তিনি। ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালে ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটায়। ভারতভাগের পর বাবা-মায়ের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে আসেন। একাত্তরের ২৫ মার্চ ছুটিতে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন, ছুটি শেষে ফিরে যান পশ্চিম পাকিস্তানে। সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমান দুজনই তাঁকে সেনাবাহিনীতে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু এরশাদকে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন। জিয়া রাষ্ট্রপতি হয়ে এরশাদকে সেনাপ্রধান করেন। একসময় এরশাদ ছিলেন জিয়াউর রহমানের সামরিক ও রাজনৈতিক পরামর্শক।
অভিযোগ আছে, তাঁরই পরামর্শে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের দূরে ঠেলে দেন জিয়াউর রহমান। এরশাদকে মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা করা হয়। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর এরশাদের নির্দেশেই মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা আবুল মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়। তখন থেকেই এরশাদের উচ্চাকাঙক্ষা বাড়তে থাকে। বিচারপতি সাত্তারকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ ক্ষমতা দখল করে আ ফ ম আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেন। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে এরশাদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। একতরফা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকেন নয় বছর। দীর্ঘ নয় বছর আঁকড়ে থাকার পর নব্বইয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
১৯৯০ সালে প্রবল গণআন্দোলনে ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র দুই মাসের মধ্যে জেল থেকে পাঁচটি আসনে জিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দারুণভাবে ফিরে এসেছিলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। ১৯৯১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে এরশাদ ছিলেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।