কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তিতে মোট ছয় ধরণের কোটায় আসন বরাদ্দ রয়েছে মোট ৯১টি । গতবছরের জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের একপর্যায়ে শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এই ধারাবাহিকতায় সকল ক্ষেত্রেই কোটা বাতিলের দাবি উঠেছে। সম্প্রতি স্মারকলিপি, আল্টিমেটাম ও একাধিক অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে পৌষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানানো হয়।
রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ১০৩০টি এবং কোটায় ৯১টি সহ মোট আসন ১১২১টি। এর মধ্যে ছয় ধরণের কোটায় ৯১টির সবচেয়ে বেশি ৩৮টি আসন রয়েছে পৌষ্য কোটায়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২৭টি, উপজাতি কোটায় ১২টি, শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটায় ৬টি, অ-উপজাতি কোটায় ৪টি এবং বিকেএসপি বা পেশাদার খেলোয়াড় কোটায় রয়েছে মোট ৪টি আসন।
আরও জানা যায়, ৩৮ টি পৌষ্য কোটার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগে প্রতিটায় ২টি করে রয়েছে। অর্থাৎ বিজ্ঞান ইউনিটে ১৪টি, মানবিক ইউনিটে ১৬টি এবং বাণিজ্য ইউনিটে রয়েছে ৮টি আসন। এছাড়া ২৭টি মুক্তিযোদ্ধা কোটার মধ্যে বিজ্ঞানে ১০টি, মানবিকে ১০টি এবং বাণিজ্যে ৭টি আসন। উপজাতি কোটার ১২টির মধ্যে বিজ্ঞানে ৪টি, মানবিকে ৬টি এবং বাণিজ্যে ২টি। শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটার ৬টির মধ্যে বিজ্ঞানে ২টি, মানবিকে ৩টি এবং বাণিজ্যে ১টি। অ-উপজাতি কোটার ৪টির মধ্যে বিজ্ঞানে ১টি, মানবিকে ২টি এবং বাণিজ্যে ১টি। তাছাড়া বিকেএসপি বা পেশাদার খেলোয়াড় কোটার ৪টির মধ্যে বিজ্ঞানে ১টি, মানবিকে ২টি এবং বাণিজ্যে ১টি। সবমিলিয়ে কোটায় বিজ্ঞানে ৩২টি, মানবিকে ৩৯টি এবং ১৯টি আসন রয়েছে বাণিজ্য ইউনিটে।
এছাড়া সর্বশেষ তিনটি (২০২১-২২, ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪) শিক্ষাবর্ষে কোটায় ভর্তি হয়েছে মোট ৯২ জন। এর মধ্যে শুধু পোষ্য কোটায় ৯ জন এবং মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন ৮৩ জন।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ আসনের বাহিরে পৌষ্য কোটাকে সম্পূর্ণ বাতিলসহ বাকি ৫৩টি কোটায় আসনকে সংস্কারের মাধ্যমে ন্যূনতম সংখ্যক আসন রেখে বাকিগুলোকে সাধারণ আসনে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান তারা।
শিক্ষার্থীরা জানান, কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে রক্ত জড়িয়েছে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কোন কোটা ব্যবস্থা চান না। সকলপ্রকার কোটার বিলোপ চান তারা। ইতোমধ্যে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি, মানববন্ধন করেছি। বাতিল না হলে প্রয়োজনে আন্দোলনে নামব। প্রশাসনকে অবশ্যই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
২০২০-২১ বর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী রনি আহমেদ বলেন, সরকারি চাকরিতে বৈষম্য দূর করার করার লক্ষ্যে সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছে। এখন আবার এসব বিষয়ে যদি আন্দোলন করতে হয় তাহলে জাতি হিসেবে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সংবিধান অনুসারে শুধু অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জন্যই কোটা থাকতে পারবে তাও এটা একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে। দেশের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা শিক্ষকরা বা মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে মেয়েরা কোনো দিক দিয়েই পিছিয়ে নয়। তাই সকল ধরনের কোটা বাতিল করা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংখ্যা বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি।
এই বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী পাবেল রানা বলেন, ২৪ শে’র বিপ্লবে কোটার বিরূদ্ধে রক্ত দিয়েছি। রক্তে গড়া নতুন বাংলাদেশে পুনরায় এইসব বৈষম্যের মানে কি? কুবি প্রশাসনের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক আবেদন জানাচ্ছি যেন, সকল প্রকার কোটা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় হতে তুলে নেয়া হয়। সকল প্রকার কোটা বাতিল না করা হলে পুনরায় ছাত্র সমাজ ফুঁসে উঠতে পারে। মেধার সুষ্ঠু মূল্যায়নে সকল প্রকার কোটা বাতিল করা হোক। এই কোটা পদ্ধতি জঘন্যতম বৈষম্যের মধ্যে একটি! তাই অনতিবিলম্বে এই ছাত্র-জনতার জীবন নাশকারী কোটা বাতিল চাই!
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, এখনো কোন আলোচনা হয় নাই। কোটার বিষয়টা নিয়ে সামনের মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে। সেখানে যেই সিদ্ধান্ত আসে, সেটাই।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, পৌষ্য কোটা বাতিল নিয়ে আমরা আলোচনা করব। আর অন্যান্যগুলো সংস্কার করে সাধারণ আসনের অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা এবিষয়েও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এবছরের ভর্তিতে অতিরিক্ত কোটার আসনগুলো থাকছে। আমার একার পক্ষে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না। সামনের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।