তানিম মল্লিক: কে বলেছে মায়ের জন্য আলাদা কোনো দিনের প্রয়োজন? আবার এ-ও ঠিক, বছরে অন্তত একটি দিন তো হোক, যেদিন শুধুই মাকে নিয়ে ভাবা যাবে, বলা যাবে—”তুমি-ই আমার সব!” মা দিবস যেন ঠিক এমনই এক উপলক্ষ, যেখানে সব ব্যস্ততা, ক্লাসের চাপ আর পরীক্ষার দুশ্চিন্তার মাঝেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা থমকে দাঁড়ায় মায়ের স্মৃতিতে।
বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে খুলনার প্রখর গরমে যখন ক্যাম্পাসের ছায়া মেলে দেওয়া গাছগুলোর নিচে স্বস্তি খুঁজছিলেন কিছু শিক্ষার্থী, তখন তাঁদের কণ্ঠে ধরা পড়ে মা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা শেয়ার করেন মাকে ঘিরে তাঁদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর উপলব্ধির গল্প।
মা দিবসে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ফারুক খান বলেন, আমার কাছে মা যেন আলাদিনের সেই চেরাগ তবে এখানে ইচ্ছা পূরণের কোনো সীমা নেই। আলাদিন যেখানে মাত্র তিনটি ইচ্ছা পেত, সেখানে আমার মা আমার প্রতিটি চাওয়াকে নিঃস্বার্থভাবে পূরণ করে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, মানুষ হিসেবে আমি যতটুকু গড়েছি নিজেকে, তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মায়ের। তিনি শুধু জন্ম দেননি, গড়েও তুলেছেন। মা আমার জীবনের আশ্রয়, ভালোবাসা আর শক্তির উৎস। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মা, তুমি আমার সবকিছু।
“মা” ভালোবাসার অশেষ প্রতিচ্ছবি
শিক্ষা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী তানবীরা তাবাসসুম ঋতু বলেন, মাকে ভালোবাসি সবসময়। মাকে ভালোবাসার জন্য আলাদা কোন দিবসের প্রয়োজন নেই।তবুও ভালোবাসার এক মাইলফলক মা দিবস। মা আছে, তাই আমি আছি। আমার জীবনের সকল বাধা বিপত্তির সবথেকে বড় ঢাল। মা-ই আমার সব থেকে বড় শক্তি,সাহস, প্রেরনা, উদ্দীপনা। আজ আমি যেখানে, পুরোটাই আমার মায়ের অবদান। মায়ের নিরলস পরিশ্রম, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও দোয়া সমন্বয়ে আজ এখানে।
মাকে নিয়ে তিনি বলেন:
“মা” মানে সবজান্তা! আমার হঠাৎ পাওয়া ব্যথা, আমার আগেই টের পেয়ে যায় আমার নীরবতা!
মা জানে আমি কি চাই, হামাগুড়ি থেকে শুরু আমার বিশ্বজয়! এই মা দিবসে আমার মা সহ পৃথিবীর সকল মাকে জানাই মাতৃ দিবসের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা
মা হচ্ছে জীবনের নির্ভরযোগ্য আশ্রয়
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের আরেক শিক্ষার্থী মালিহা জান্নাত মিশা জানান, মা আমাদের জীবনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। তিনি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, ত্যাগ আর মমতার প্রতিচ্ছবি। মা দিবসে আমরা সেই অসীম স্নেহ আর যত্নের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যা মা প্রতিদিন আমাদের জন্য বিলিয়ে দেন। মা আমাদের প্রথম শিক্ষক, বন্ধু ও প্রেরণার উৎস। তাঁর ভালোবাসা আমাদের চলার পথের আলো।
তিনি যোগ করেন, আজকের দিনে আমরা মাকে শ্রদ্ধা জানাই, ভালোবাসা জানাই এবং তাঁর মুখে হাসি ফোটাতে চাই। মা শুধু একটি শব্দ নয়, একটি অনুভব, একটি ভালোবাসার চিরন্তন প্রতীক। মা দিবসে তাই বলি—ধন্য তোমায়, মা।
তোমার হাসির জন্যই স্বপ্ন দেখি, আম্মু
সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী শাম্মী আক্তার মিথি বলেন, আমার মা আমার কাছে পৃথিবীর সেরা মা। বাবার একার আয়ে পুরো সংসার চালিয়ে আমাদের ২ বোনকে পড়ালেখা করানো আমার মায়ের জন্য খুব বেশি সহজ ছিলো না যেটা এখন বুঝি। যেভাবে পেরেছে্ন,যখন পেরেছেন আমাদের ইচ্ছাপূরণ করার চেষ্টা করেছেন।আর এটাতে তার কোনো স্বার্থ আমি দেখিনি। আমার প্রতিটি ছোট ছোট সাফল্যে মা আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণা জোগায়।
তিনি বলেন, আমার এতোটুকু জীবনে যা কিছু অর্জন তাতে এই মানুষটার অবদান বলে প্রকাশ করার মতো না।আমি আমার মাকে ভীষণ ভালোবাসি।মা দিবসে আমি আমার মাকে বলতে চাই,”আম্মু তোমার হাসির জন্য জীবনে অনেক বড় কিছু করতে চাই।”
মায়ের স্বপ্নগাঁথা
আর্কিটেকচার ডিসিপ্লিনের রাফিদ ফয়সাল কাব্য বলেন, মায়ের চোখে আমি ছিলাম তার না বলা স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। নিজের অপূর্ণ ইচ্ছেগুলো আমাকে ঘিরে রাঙাতে চেয়েছেন তিনি। মাটি ছুঁয়ে থাকা জীবনে আমার আকাশ ছোঁয়ার সাহসটা মা-ই দিয়েছেন। তার নিঃশব্দ ত্যাগ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর অনন্ত ধৈর্যের গল্পগুলো যেন প্রতিদিন একেকটি স্বপ্নগাঁথা। আমার জীবনে যদি কাউকে সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞতা জানানোর মানুষ বলতে হয়, তবে নিঃসন্দেহে সে মানুষটি আমার মা।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, মা শুধু জন্মদাত্রী নন, তিনি আমার প্রথম শিক্ষক, প্রথম বন্ধু, এবং সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। আমি যখন ক্লান্ত, হেরে যাই—মায়ের চোখেই দেখি নতুন শুরু। তার স্বপ্ন আজ আমার পথের দিশা, প্রেরণার উৎস। মায়ের স্বপ্নগাঁথা; তাই শুধু গল্প নয়, আমার জীবনের মানচিত্র।


