২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে বিপুল সংখ্যক নারী শিক্ষার্থীও এতে অংশগ্রহণ করে। এমনকী তিন জন নারী সমন্বয়কারীও এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন: নুসরাত তাবাসসুম, রাফিয়া রেহনুমা, ফাতিমা। এই তিন জনের নেতৃত্বে আমাদের নারী শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে, শহরে নারী শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ আমরা দেখতে পাই। ইতিপূর্বে অন্য কোনো আন্দোলনে আমরা এত বেশি নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখতে পাইনি। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা শেখ হাসিনা বিরোধী স্লোগান ও বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছে। নারীরা যদি একাত্ম না হতো, তাহলে হয় তো শেখ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হতো না।
যেসব কারণ নারী শিক্ষার্থী আন্দোলনে যেতে উৎসাহিত করেছে:
হাসিনা সরকারের অনিয়ম, দূর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করতে দেখে আমাদের নারী সমাজ বিশেষ করে মর্মাহত হয়েছিলেন। তাই, তারা সাহস যোগাতে ও উদ্বুদ্ধ করতে নিজেরা মাঠে নেমে পড়েন। সন্তান যখন মায়ের কাছে থেকে সাপোর্ট পায়, তখন কোনো কিছুই তাকে আন্দোলনে যেতে বাধা সৃষ্টি করে না। এই আন্দোলনে হিজাব-বোরকা পরিহিত অনেক নারী শিক্ষার্থীকে মাঠে আন্দোলনরত দেখা যায়। এটিকেও আমি এই আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক বলে মনে করি।
আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে:
২০২৪ সালে ছাত্র জনতার সফল অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। যেটা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। এই আন্দোলনে নারী শিক্ষার্থীদের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে, যেটা একেবারেই সত্য। বিশেষ করে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক এই নারী শিক্ষার্থীরা নিগৃহীত হয়েছেন, নিপীড়িত হয়েছেন, অত্যাচারের শিকারের হয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলা ব্লকেড, কমপ্লিট শাটডাউন, অসহযোগ আন্দোলন এবং সর্বশেষ এক দফা দাবীতে যে আন্দোলন – নারী শিক্ষার্থীরা একদম সম্মুখ সারিতে অংশগ্রহণ করেন। মেয়েরা নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এটিকে গণআন্দোলনে রূপান্তর করেন। কেউ আর বসে থাকতে পারেননি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন নারী শিক্ষার্থীদের ওপর প্রকাশ্যে হামলা করে, লাঠিপেটা করে। এটা মেয়েদের জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো। তা সত্ত্বেও তারা সরকারের সকল দমনপীড়ন নীতি উপেক্ষা করে তারা রাজপথে অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে সফল করেন।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী যেমন রাষ্ট্র চাই:
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আমি চাইবো যে, গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বৈষম্যহীন, দূর্নীতিমুক্ত, মেধা ও নায্যতার ভিত্তিতে কল্যাণকর নতুন একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণ হোক। এটাই আমরা মনেপ্রাণে সকলে প্রত্যাশা করবো।
ড. মুহাম্মদ সাখাওয়াত হুসাইন
প্রফেসর, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়