জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা মামলা প্রত্যাহার করে তদন্ত সাপেক্ষে নতুন মামলা দায়ের করাসহ ছয় দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে গণপিটুনির ঘটনায় জুলাইয়ের হামলায় একাধিক হত্যা মামলার আসামি সুদীপ্ত শাহীন কর্তৃক দায়েরকৃত এই হত্যা মামলার কোন প্রাসঙ্গিকতা নেই বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এ মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা।
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো – নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে উক্ত ঘটনায় সরাসরি জড়িতদের মাত্রা-অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। লঘু পাপে কাউকে শুরু দন্ড প্রদান হতে বিরত থাকতে হবে।শামীম মোল্লাকে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর পরবর্তী নিরাপত্তা অফিসের গাফিলতির ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।মারধর এবং পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনার গভীর তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনের বিতর্কিত কর্মকান্ড বিশ্লেষণপূর্বক ঘটনাস্থলে উপস্থিত নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।জুলাইয়ের গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত আসামী সুদীপ্ত শাহীন কর্তৃক এই মামলা রুজু করা সম্পূর্ণ অযাচিত এবং ভিত্তিহীন। বিতর্কিত ব্যক্তি কর্তৃক দায়ের করা এই বিতর্কিত মামলা অতিদ্রুত প্রত্যাহার করে তদন্ত সাপেক্ষে নতুন মামলা দায়ের করতে হবে।সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর জুলাই এবং আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া নির্মম নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সকল শিক্ষক, কর্মচারী, এবং শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কারসহ দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
মানববন্ধনে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বাপ্পির সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গ্রেফতারকৃত রায়হানের মা ও শিক্ষার্থীরা।
রায়হানের মা বলেন, রায়হান তার অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী প্রাপ্য শাস্তিটুকুই যেন পায়। তাকে সামনে রেখে অন্য আসামিরা যেন পার না পেয়ে যায়। ঘটনাস্থলে থাকায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে।রায়হান আমার পরিবারের একমাত্র অবলম্বন সকলের সহযোগিতায় আমি তাকে ফিরে পেতে চাই।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা বিনতে তৃষা বলেন, “শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনায় আটজনকে হত্যা মামলার আসামি করা হলেও কেবল মাহমুদুল হাসান রায়হানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমরা দেখছি তাকে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে চিহ্নিত অপরাধী হিসেবে সামনে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। লঘু পাপে কেউ গুরু দন্ড পাক তা আমরা চাইনা। সুষ্ঠু তদন্তের আগেই কেন তাকে গ্রেফতার করা হলো? নিরাপত্তা অফিসের তালা ভেঙে শামীম মোল্লাকে মারধরের সময় তার নিরাপত্তা কেন দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীরা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলো? এর জবাব প্রশাসনকে দিতে হবে।”
একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সিয়াম তালুকদার বলেন, “সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া রায়হান গ্রেফতার হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।মামলা দায়েরকারী সুদীপ্ত শাহীন ইতোমধ্যে হত্যা মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও তার করা মামলার গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া হচ্ছে যেখানে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক আইন অনুযায়ী বহিষ্কার করার কথা।তার করা এই মামলাটি প্রত্যাহার করে নতুনভাবে মামলা করে সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড কামরুল আহসান বলেন, ” আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী আমাদের যথাসাধ্য ব্যবস্থা নিয়েছি। শামীম মোল্লা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তাই তার নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। তবে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীদের গাফিলতির বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এ নিয়ে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”