গত জুলাই মাসব্যাপী দেশজুড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে হওয়া আন্দোলন, আগস্টের শুরুতে এসে সরকার পতনের আন্দোলনে রুপ নিলে জনগণের তোপের মুখে দেশত্যাগ করে শেখ হাসিনা সরকার।
হাসিনা সরকারের এই বিলুপ্তির সাথে সাথে দেশব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদত্যাগ করতে শুরু করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন অধ্যাপক ড. নূরুল আলম। এরপর একে একে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাগামহীন পদত্যাগে অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম।
এমন পরিস্থিতিতে কে হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কেমন উপাচার্য চায় শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষতার কারণে এ আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
তবে তার বিগত কয়েকবছরের কার্যকলাপ নিয়ে বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বলছেন তিনি উপাচার্য হলে ক্ষতির মুখে পড়বে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববৈচিত্র্য ও সুস্থ সংস্কৃতি। এ নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, চারুকলা বিভাগের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের পাশের প্রায় পাঁচ শতাধিক গাছ নিধনের নেপথ্যে ছিলেন তিনি। যেখানে শিক্ষার্থীরা এমন প্রকৃতি বিধ্বংসী কাজ ঠেকানোর চেষ্টা করলে শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদেরকে উদ্দেশ্য করে বিরুপ মন্তব্য করেন তিনি যা নিয়ে সেসময় তৈরী হয়েছিল তুমুল বিতর্ক।
এছাড়াও নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে মাদকসেবনসহ এ সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপে তার বিশেষ উদারতা রয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, তিনি উপাচার্য হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশকে ব্যাহতই কেবল নয় নৈরাজ্যও বয়ে আনবে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, বিগত ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়কে যথাযথ একাডেমিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার পরিবর্তে, বিভিন্ন অনিয়ম ও নিয়োগে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কেবলমাত্র একটি কর্মসংস্থানের স্থানে পরিণত করা হয়েছে। দলীয় পরিচয়ের মাধ্যমে নিজের সিন্ডিকেট রাজ্য আমরা আর দেখতে চাইনা। আমরা এমন উপাচার্য চাই যিনি সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগরে বহুমুখীতার চর্চায় উদ্যোগী হবেন। কার্যকর একাডেমিক মাস্টারপ্লান প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখবেন।বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ ও প্রকৃতির সংরক্ষণে কাজ করবেন এমন শিক্ষককে আমরা দায়িত্বে চাই।
বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, বিগত ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়কে যথাযথ একাডেমিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার পরিবর্তে, বিভিন্ন অনিয়ম ও নিয়োগে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কেবলমাত্র একটি কর্মসংস্থানের স্থানে পরিণত করা হয়েছে। দলীয় পরিচয়ের মাধ্যমে নিজের সিন্ডিকেট রাজ্য আমরা আর দেখতে চাইনা। আমরা এমন উপাচার্য চাই যিনি সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত জাহাঙ্গীরনগরে বহুমুখীতার চর্চায় উদ্যোগী হবেন।জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করবেন এবং কার্যকর একাডেমিক মাস্টারপ্লান প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরে দৃশ্যমান ভূমিকা রাখবেন।এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও দমন খুবই জরুরি।তাই খুবই দায়িত্বশীল ও আদর্শবান একজন শিক্ষককে আমরা এই দায়িত্বে চাই।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি ও শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, আমরা একটা কঠিন সময় পার করছি। এসময়ে উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা শিক্ষককেও কঠোরতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে, দলের উর্ধ্বে গিয়ে নিরপেক্ষতার সাথে শিক্ষার্থীদের যথাযথ কল্যাণ নিশ্চিত করতে হবে।লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিকে প্রশয় না দিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব গঠনসহ সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপাচার্য হিসেবে ভূমিকা নিশ্চিতের লক্ষ্যে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি নিরসন, ক্রমান্বয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিরসনসহ ক্যাম্পাসে খাবার মান নিশ্চিতকরণ, হলসমূহে শিক্ষার্থীদের সুবিধা নিশ্চিতকরণ, মাদক নিয়ন্ত্রণসহ শিক্ষার্থীদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাবেন।
এমনকি শিক্ষার্থীদের লিঙ্গ ও ধর্মীয় বিশ্বাসের কারনে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। গত ৫ই আগস্টে সরকার পতনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যে অভিযোগ তুলেন একাধিক শিক্ষার্থী।
রবিউল/আরএ