ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করে আসছিলো পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। এর জেরে গতকাল মঙ্গলবার মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকের পর ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু এতে শ্রমিকেরা সন্তুষ্ট হননি। তাই আজ সকাল থেকে আবারও গাজীপুরের কোনাবাড়ী, জরুন, বাইপাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ শুরু পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা।সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়। বিক্ষোভের একপর্যায়ে শ্রমিকেরা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে কাঠ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা করেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় শ্রমিকেরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। ।
এসময় গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক নারী নিহত হন। আন্দোলনের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সাথে সাথে কোনাবাড়ীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পরে সেখান থেকে গাজীপুরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় গাজীপুর হাসপাতা্লেও চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না হলে ডাক্তাররা তাকে ঢাকায় পাঠানোর জন্য রেফার্ড করে। ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান তিনি।
নিহত পোশাকশ্রমিকের নাম আঞ্জুয়ারা খাতুন। তার বয়স ৩০ বছর। কোনাবাড়ীর ইসলাম গার্মেন্টসে সেলাই মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তিনি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার চর নাটিপাড়া এলাকার জামাল হোসেনের স্ত্রী।
একই ঘটনায় জালাল উদ্দিন (৩৮) নামে আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনিও একই কারখানা সুপারভাইজার ছিলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, জালালের পেটে ও হাতে শটগানের গুলি লেগেছে। তাঁকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থা গুরুত্বর।
আঞ্জয়ারা খাতুন ও জালাল উদ্দিন ছাড়াও পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটের আঘাতে অন্তত আরো ১০ জন শ্রমিক আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে কোনাবাড়ী পপুলার, কোনাবাড়ী ক্লিনিক ও গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিল্প পুলিশ, থানা-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবির সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে।