রুশাইদ আহমেদ: ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের অল্প কয়েকদিনের মাথায় একযোগে পদত্যাগ করেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) তৎকালীন উপাচার্য, প্রক্টর, ট্রেজারার থেকে শুরু করে ৪০-এরও বেশি পদে দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিরা। পরে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি নতুন উপাচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। এরপর ধীরে ধীরে খালি হওয়া পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হলেও চার মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের পদ শূন্য হয়ে আছে।
এমতাবস্থায়, প্রশাসনিক গতিশীলতা বৃদ্ধিতে দ্রুত ট্রেজারার নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তারা। অভ্যন্তরীণ যেকোনো শিক্ষককে ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক— এটিও অনেকের দাবি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে আশা রাখেন তারা।
এ বিষয়ে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক খোকন ইসলাম বলেন, ইতোপূর্বে ২০০৯ সাল থেকে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রেজারার এসেছে। তারা এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করেন না, এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজের মধ্যে ধারণ করেন না। এসে নিজের বেতন-ভাতা নিয়ে কোনোরকম দায়িত্ব পালন করে মেয়াদ শেষ হলে চলে যান। আবার যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রুপিংয়ের জন্ম দিয়ে যান অনেকে, এতে প্রশাসনে কাজের গতি কমে যায়।
তাই আমরা চাই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেষ্ট যোগ্য এবং অভিজ্ঞ শিক্ষক রয়েছেন তাদেরকে ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ চাই, অন্যথায় বাইরে থেকে ট্রেজারার নিয়োগ দিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বুঝতে বুঝতে এক বছর চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিশীলতা খর্ব হয়। আমরা চাই না বাইরে থেকে কেউ এ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আসুক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ এটা মেনে নেব না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি মো. আরমান হোসেন বলেন, আন্দোলন পরবর্তী দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি, ট্রেজারারের মতো প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে এখনো নিয়োগ হয়নি। এ জন্য প্রশাসনিক কাজগুলো খুব ধীরগতিতে চলছে।বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পার হয়েছে। আমি মনে করি, এই পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই যোগ্য শিক্ষককে পদে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। কারণ বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, যাঁরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে দায়িত্বগুলো পায়, তাঁরা তুলনামূলকভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। কিন্তু বাইরে থেকে যারা এসেছেন তাঁরা তা না করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানকে ক্ষুণ্ন করেছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ফারজানা জান্নাত তোশি বলেন, “অভ্যুত্থানের পর যেখানে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অল্প সময়ের মধ্যে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেখানে আমাদের ভিসি ড. শওকাত স্যারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এক মাসেরও বেশি সময় পরে। তেমনিভাবে এখনও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারসহ অন্য দুয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। এতে আমাদেরকে কাজে ট্রেজারারের কাছে যেতে হলে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। কারণ, ভিসি স্যারও কাজের চাপে থাকছেন।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্বিকভাবে প্রশাসনিক গতিশীলতা আনয়নে ট্রেজারার নিয়োগ দেওয়া দরকার। পাশাপাশি, এমন ব্যক্তিকে এখানে নিয়োগ দিতে হবে যিনি সততার সঙ্গে কাজ করবেন। এ ক্ষেত্রে, আমার মনে হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ট্রেজারার হওয়ার মতো গুণসম্পন্ন অনেক শিক্ষক রয়েছেন। কারণ বাইরে থেকে ট্রেজারার হয়ে এসে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না দেখে অনেকেই পূর্বের কর্মস্থলে ফিরে যান। জবাবদিহিতারও একটি বিষয় এখানে থাকে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, “আমি এখানে আসার পর থেকেই নিজের বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ট্রেজারার না থাকায় আমার ওপর অনেক চাপ পড়ছে। ট্রেজারার নিয়োগ দিলে আমার প্রশাসনিক কাজ করা আরও সহজ হবে। তবে বিষয়টি আমার হাতে নেই। ইতিমধ্যে ইউজিসির জ্যেষ্ঠ স্যারদের সঙ্গে আমি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। দেখা যাক্ তাঁরা কী করেন।”
আরএস