জবি প্রতিনিধি
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আসন্ন ১৯ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। এ নিয়ে বিগত কয়েক বছর যাবৎ শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ না নিলেও পরোক্ষভাবে ভোটের রাজনীতিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে সাদা দল। এদিকে আওয়ামী পন্থী শিক্ষকেরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হওয়ায় নির্বাচনে জয় পাওয়ার জন্য প্রত্যেক প্যানেলই বিএনপি পন্থী সাদা দলের শিক্ষকদের ভোটের উপর নির্ভর করে বলে জানিয়েছে কয়েকটি সূত্র।
ফলে নীল দলের ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে সাদা দলের ভোটে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা চার ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান ও অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান এবং অধ্যাপক ড. মো. নূরে আলম আব্দুল্লাহ ও অধ্যাপক ড. মোমিন উদ্দিনের নেতৃত্বে নীল দলের দুটি কমিটি রয়েছে। পাশাপাশি অধ্যাপক মিল্টন বিশ্বাসের নেতৃত্বাধীন জয় বাংলা শিক্ষক সমাজ এবং নাসির উদ্দীনের স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদও সক্রিয়। তবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে শেষোক্ত দুটি গ্রুপ অংশগ্রহণ করছে না। এদিকে স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজের সভাপতি অধ্যাপক ড হোসনে আরা বেগম সহ তিনজন সিনিয়র অধ্যাপক নীলদলের একাংশে ( ড. আবদুল্লাহ ও ড. মোমিন) যোগদান করেছেন গত ২১ নভেম্বর। অন্যদিকে নীলদলের অপর অংশ বলছে স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য তাদের পক্ষেই আছে। কিন্তু এ দাবী যৌক্তিক বলে মনে করছেন না স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, আমি সহ এখন পর্যন্ত স্বাধীনতা শিক্ষক সমাজের অনেকেই ড. আবদুল্লাহ ও ড. মোমিন উদ্দিনের সমর্থিত প্যানেলকেই সমর্থন করি।
নীল দল সূত্রে জানা যায়, বিভক্তির আগে ২০১৫ সালে ৩৮৬ জন শিক্ষক তাঁদের সদস্য থাকলেও এর পর আর কোনো গ্রুপই তাঁদের সদস্য সংখ্যা প্রকাশ করেনি। অন্যদিকে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে সাদা দলের ১৩৮ জন সদস্য থাকলেও পরে অনেকেই নিষ্ক্রিয় আর রং বদল করেন। তবে বর্তমানে সাদা দলের শিক্ষকদের সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
এ বিষয়ে নীল দলের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা চাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী সকল নীল দলের একাত্মতা। সবাই একত্র হয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে। এবার নির্বাচনে আমরা সকল শিক্ষকদের সমর্থন নিয়ে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এছাড়া বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সম্পর্কে বলেন তারা নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ না করলেও পরোক্ষভাবে নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকদের কল্যানে যারা বিগত দিনে কাজ করেছেন তাদের পক্ষেই সাদা দলের সদস্যরা ভোট প্রদান করবেন বলে আমি আশাবাদী।
জবি শিক্ষক সমিতির নতুন নেতৃত্বে কে আসবে তা সাদা দলের ভোটের উপর নির্ভর করে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নীল একাংশের সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আবদুল্লাহ বলেন এ কথা সঠিক নয়। কিন্তু বিগত দিনে এমন হয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমরা এবারের নির্ব্চনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষকদের ভোটে জয়ের জন্য আশাবাদী।
এ বিষয়ে জবি সাদা দলের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইস উদ্দীন বলেন, বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি না। তবে আমরা গনতন্ত্রে বিশ্বাসী তাই নির্বাচনে ভোটপ্রদান করতে আমরা অবশ্যই অংশগ্রহণ করবো। ভোটদানের ক্ষেত্রে যে যার ব্যাক্তিস্বাধীনতা অনুযায়ী ভোট প্রদান করবে।
সার্বিক বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. ছগীর উদ্দীন আহমেদ খন্দকার বলেন, শিক্ষক সমিতির এ নির্বাচনে ১৫টি পদের বিপরীতে নীল দলের দুই পক্ষের ৩০ জন শিক্ষক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শিক্ষকদের এ নির্বাচনে ভোটার ৬৬৭ জন। এর মধ্যে কিছু ভোটার শিক্ষা ছুটিতে বিদেশে আছেন। তারাও অনলাইনে ভোট প্রদান করতে পারবেন। আমা করি আমরা একটি সুষ্ঠ নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হবো।
মো. জুনায়েদ শেখ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়