আজ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুরুষ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ছিলেন এক অনন্য প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব—একাধারে কবি, সুরকার, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, গায়ক, অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা।
১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই কবি। তাঁর ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন।
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রেম ও বিদ্রোহের কবি। বাংলা কবিতায় তাঁর আবির্ভাব এক উল্কাপাতের মতো, যিনি বলেছিলেন—
“বল বীর –
বল উন্নত মম শির!”
তার “বিদ্রোহী” কবিতায় যেমন দ্রোহের দাবানল, তেমনি তাঁর প্রেমের গানে ছিল মরমি আবেগ ও রোমান্টিকতার জোয়ার। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাঁর গান ও কবিতা বাঙালির হৃদয়ে এক গর্বিত অবস্থান তৈরি করে রেখেছে।
নজরুলের সৃষ্ট সংগীত বাংলা গানের জগতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। তিনি সুরের জগতে বৈচিত্র্য এনেছিলেন এবং অসংখ্য রাগ-রাগিণী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীতকে বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। তার রচিত কবিতা, গান ও সাহিত্য বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিতে নবজাগরণ সৃষ্টি করে।
শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার সাহসী কণ্ঠস্বর যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। বিশেষত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার গান ও কবিতা মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ ও প্রেরণার অনন্ত উৎস ছিল।
১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তিনি ঢাকার পিজি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।
আজ দেশজুড়ে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে নজরুল জন্মজয়ন্তী। জাতীয় পর্যায়ের মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে কুমিল্লায়, যা আজ (রবিবার) শুরু হয়ে তিন দিনব্যাপী চলবে। এবারের জন্মবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’। এই অনুষ্ঠান সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে জাতীয় নাট্যশালার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সমবেত সংগীত, নৃত্য, একক সংগীত ও নাট্য পরিবেশনা থাকবে।