জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবিতে) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অবসরগ্রহণকারী শিক্ষক প্রফেসর শেখ মোহাম্মদ মনজুরুল হক (উপ-উপাচার্য, প্রশাসন) ও প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামসুল আলমকে অবসরোত্তর সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ‘অবসরোত্তর সংবর্ধনা ও কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্মাননা অনুষ্ঠান ২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ সংবর্ধনা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভিসি নুরুল আলম বলেন,‘প্রফেসর শেখ মনজুরুল হক আমার ১ বছরের জুনিয়র ও প্রফেসর শামসুল আলম ২ বছরের জুনিয়র, তাদের সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক আছে। দুইজনই স্নাতক ১ম হয়েছেন, প্রশাসনিক দ্বায়িত পালন করেছেন, পিএইচডি গবেষনা করেছেন’।
বিদায়ী বক্তব্যে প্রফেসর শেখ মনজুরুল হক বলেন,‘এটা একটা দুরদান্ত অনুষ্ঠান, কৃতি শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠান সম্মাননা প্রদান করা একটা মহৎ উদ্দ্যোগ। আমাদের সম্মাননা প্রদান, আমাদেরকে স্মরন করাটা আনন্দের, তোমরা আমাদেরকে মনে রেখেছো, এই সম্মাননা আমাদের বুকটা আনন্দে ভরে গেছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার পরামর্শ তোমরা পিতা মাতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবে, জ্ঞান অর্জন করবে, মন দিয়ে পড়বে, প্রতিষ্ঠিত হবে, সব সময় উচুতে তাকাবে, তোমাকে বড় হতে হবে এর মানে এই নয় যে গায়ে গাতরে বড় হবে বরং তুমি তোমার চিন্তায়, আচরনে, ব্যবহারে, জ্ঞান অর্জনে বড় হবে। জ্ঞান অর্জন তোমাদের মেধাকে সানিত করবে, স্বপ্ন দেখো, সেই পথে অগ্রসর হও’। কাজের মধ্যে থাকলে ভালো লাগে, শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছি কিন্তু কর্মজীবনে এখনো কাজ করে যাচ্ছি, তোমাদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
প্রফেসর ড. শামসুল আলম বলেন,‘আমি একধরনের আড়ষ্ঠবোধ করছি কারন আমি সব সময় ক্লাসে, সেমিনারে লেকচার প্রদান করে অভ্যস্ত কখনো বিদায়ী বক্তব্য দিতে হবে তা ভাবী নি। আমি গত ৩০ শে জুন বিভাগ থেকে অবসর গ্রহন করেছি। কিন্তু এই অবসর জীবনে আমার সময় কিভাবে কাটবে তা কখনোই ভাবা হয় নি। শিক্ষকতার জীবনে প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত বিভাগে সময় দিয়েছি। আমি ১৯৮৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করেছি, সেই দিন থেকেই জান-প্রান দিয়ে কাজ করে গিয়েছি। কর্মজীবনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক কিছু পেয়েছি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছুই দিয়ে যেতে পারি নি। বাংলাদেশের টারশিয়ারি লেভেল ভূগোলে আমাদের ভূগোল বিভাগ সবচেয়ে ভালো, আমরা বাংলাদেশের মধ্যে সেরা। বিভাগের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে আমরা যেনো আমার ছাত্র আমার ছাত্রী এই বোধ থেকে বের হয়ে আসতে পারি, শিক্ষার্থীরা যেনো রিসোর্চকে যথাযথ ব্যবহার করতে পারে এবং আমি আপনি মিলেই আমরা হই এই বোধটা যেনো সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে আমরা এখন যে অবস্থানে আছি তার থেকে বহু উপরে উঠতে পারবো তাই আমার আহবান থাকবে আমরা যেনো সত্যিকার অর্থে আমরা হয়ে কাজ করতে পারি’।
সমাপনী বক্তব্যে বিভাগের সভাপতি প্রফেসর দ. শাহেদূর রশীদ বলেন,‘প্রথমেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছি বিভাগের সকল শিক্ষার্থীদের, গতকালই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তারা আজকের প্রোগ্রামে উপস্থিত হয়েছেন। আমরা আজকে তিন ধরনের পুরস্কার প্রদান করেছি। এত সুন্দর একটা আয়োজনে সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি হাফিজা মাদামকে, সাধারণত প্রশাসনিক দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা আসতে চান না এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলোতে কিন্তু হাফিজা মাদামের জন্যই এই বিশেষ মানুষগুলোকে পাওয়া। নারী সহকর্মীদের বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাদের সৃষ্টিশীল চেতনায় অত্যন্ত সুন্দর একটি আয়োজন করতে পারা। মনজুরুল স্যারকে বিশেষ ধন্যবাদ আজকে স্ট্যাজে বসা অবস্থায় উনার নাতী হয়েছে তারপরও উনি প্রোগ্রামে এসেছেন। আলম স্যারকে বিদায় দিতে পারবো না, স্যার আমাদের মাঝে সব সময় থাকবেন। চেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন ভাবীর জন্য, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় যে সবুজায়ন তা উনার হাত ধরেই সম্ভব হয়েছে, স্যার ভাসানী হলের প্রভোস্ট থাকাকালীন ভাসানী হলের পরিত্যক্ত পুকুরকে উনি জীবন্ত করেছেন। সবশেষে আমাদের ছাত্রদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং জুগার সকল সদস্যকে অভিভাদন জানাচ্ছি এত সুন্দর আয়োজন সম্পন্ন করতে পারার জন্য’।
এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের কৃতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে “প্রফেসর ড. হাফিজা খাতুন গোল্ড মেডেল”, “মেজর জেনারেল আব্দুল মান্নান সিদ্দিকি বারসারি ফান্ড” এবং “সোহেল স্মৃতি এওয়ার্ড” প্রদান করা হয়।
প্রফেসর ড. হাফিজা খাতুন গোল্ড মেডেল প্রাপ্তরা হলেন মুনিয়া তাহসিন (৪৫ ব্যাচ), দীবা তাসনিম (৪৬ ব্যাচ), নুসরাত জাহান (৪৬ ব্যাচ)।
মেজর জেনারেল আব্দুল মান্নান সিদ্দিকি বারসারি ফান্ড প্রাপ্তরা হলেন মিফতা উল জান্নাহ (৪৯ ব্যাচ), রুবাইয়াৎ জেসমিন অর্পা (৪৮ ব্যাচ), উম্মুল মোমেনিন কোয়েলি (৪৭ ব্যাচ) এবং মোঃ এনামুল হক (৪৬ ব্যাচ)।
সোহেল স্মৃতি এওয়ার্ড প্রাপ্তরা হলেন দীবা তাসনিম (৪৬ ব্যাচ) ও নুসরাত জাহান (৪৬ ব্যাচ)।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য ড. হাফিজা খাতুন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) মোঃ মোস্তফা ফিরোজ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার ও বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন বিভাগ। বিশ্ব র্যাংকিং-এ সারা বাংলাদেশে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের শ্রেষ্ঠ বিভাগ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ।
রবিউল হাসান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়