গণপিটুনির শিকার হওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বুধবার দিবাগত রাত নয়টায় সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন।
গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, “আমাদের এখানে তাকে নিয়ে আসার পর আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে তিনি মৃত। অর্থাৎ তাকে আমাদের এখানে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তার শরীরে সেরকম গুরুতর কোন ক্ষত পাওয়া যায়নি। “
এছাড়াও তার মৃত্যুর কারণ উদঘাটনে ময়নাতদন্তের প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
এর আগে গত ১৫ জুলাই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতাকে মারধর করা হয়। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেইট সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক সংলগ্ন একটি দোকানে তিনি অবস্থান করছিলেন। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাকে আটক করে গণধোলাই দেন। পরে খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম সেখানে উপস্থিত হয়। এক পর্যায়ে নিরাপত্তা কর্মীদের সহায়তায় তাকে নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে আসা হয়। এরপর প্রক্টরিয়াল টিমের খবরে আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি দল নিরাপত্তা শাখায় আসে।এরপর তাকে ১৫ জুলাইয়ে হামলার ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শামীম মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকায় থাকেন। আশেপাশের এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ আশুলিয়া থানায় চারটি মামলা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানা পুলিশ। গত ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থানরত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও বহিরাগত সন্ত্রাসী কর্তৃক হামলার ঘটনায় প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বলেন, বিকেলে খবর পেয়ে নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে ৩৯ ব্যাচের সাবেক ছাত্রকে উদ্ধার করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসা হয়। পরে তার সাথে কথা বলে ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে আগে থাকা মামলায় তাকে আশুলিয়া থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে গণধোলাইয়ের জের ধরে তার এই বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনায় বুধবার রাত দুইটায় ঘটনার প্রতিবাদে ও সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় শুরু হয়ে কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা দ্রুততম সময়ে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।