জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জনের ৩ দিন করে রিমান্ড মন্জুর করেছে আদালত।
আজ বিকেলে ঢাকার সিনিয়র চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাবেয়া বেগম প্রত্যেকের ৩ দিন করে রিমান্ড মন্জুর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ। তিনি বলেন, জাবিতে ধর্ষণের ঘটনায় প্রত্যেকের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান সাগর, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামান। এছাড়া পলাতক রয়েছেন শিক্ষার্থী মোঃ মুরাদ ও বহিরাগত মামুনুর রশীদ মামুন। মামলায় মুরাদকে ভুক্তভোগীর স্বামীকে আটকে মারধরের অভিযোগে আসামি করা হয়েছে। এঘটনায় মোস্তাফিজুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
গতকাল শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে পার্শ্ববর্তী বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতর ২১ বছর বয়সী স্ত্রীকে ধর্ষন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত রশীদ মামুন।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ভুক্তভোগীর স্বামী রাতেই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদকে ধর্ষনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাকি চারজনের বিরুদ্ধে মারধর ও আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামী পূর্বপরিচিত মামুনের সাথে দেখা করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হলে যান। পরে মামুনকে টিভি ও ফ্রিজ ক্রয়ের কথা বলেন ভুক্তভোগীর স্বামী। পরে মামুনের কথামত স্ত্রীকে ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে বলেন। স্বামীর কথামত ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে মামুন স্বামীকে মীর মোশাররফ হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রেখে মারধর করেন। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীকে স্বামীর সাথে দেখা করার কথা বলে কৌশলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষন করেন মামুন ও মোস্তাফিজ। পরে দুইজন ভুক্তভোগীকে স্বামীর কাছে নিয়ে আসলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এসময় মামুন ও মোস্তাফিজ গ্রেপ্তার তিনজনের সহায়তায় পালিয়ে যায়। এঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী থানায় অভিযোগ দায়ের করলে রাতেই ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীকে স্বাস্থ্য পরিক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের রাষ্ট্রীয় আইনে এবং বিশ্ববিদ্যালয় আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।
রবিউল হাসান