প্রতিবেদক,
মোহাম্মদ নিলয়:
কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু ঘিরে পাক-ভারত দুই দেশের মধ্যেই চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পেহেলগাম হামলায় ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে। যার ফলশ্রুতিতে একের পর এক কঠিন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় ভারতকে। অবনতি হতে থাকে দুই দেশের সম্পর্ক। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বড় সিদ্ধান্ত নেয় ভারত যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বহু পুরনো সিন্দু নদীর পানি বন্টন চুক্তি। চুপ থাকে নি পাকিস্তানও তারাও পাল্টা জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত করে এমনকি ভারতের জন্য তাদের আকাশসীমাও বন্ধ করে দেয় পাক সরকার। সরাসরি বলে দেয়, সিন্দু চুক্তি স্থগিত করাটা তারা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলেই মনে করছে। এরপর থেকেই শুরু হয় নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর টানা গোলাগুলি, প্রায় বারো রাত ধরে দুপক্ষের সেনারা মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়ায়, আঘাত পাল্টা আঘাত চলছে এখনো।
কিন্তু গত মঙ্গলবার ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত, যার মধ্যে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরসহ নয়টি স্থানে বিস্ফোরণ হয়। পাকিস্তান দাবি করছে, এই হামলায় তাদের ৩৮ জন বেসামরিক লোক নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে, পাশাপাশি তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে বলেও দাবি করে। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বক্তব্য, তারা শুধু জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে এবং এতে অন্তত ১০০ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। ভারতের তরফ থেকেও অভিযোগ এসেছে, পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবর্ষণে কাশ্মীরে তাদের ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছে। এই পাল্টাপাল্টি হামলা ও দাবি-প্রতিদাবির মাঝে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এখন আগুনের চেয়েও ভয়ংকর। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধান এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ভারত যদি আরেকবার এমন অভিযান চালায় তবে তারা পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত।
এরইমধ্যে আজ ১০ মে, পাকিস্তান ‘অপারেশন বানিয়ান মারসুস’ চালু করার কথা জানিয়েছে, যার আওতায় ভারতের পাঠানকোট, উধমপুরসহ বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় হামলার দাবি করেছে পাকিস্তান সেনারা। ভোররাতে শ্রীনগরে একাধিক বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং শহরজুড়ে ব্ল্যাকআউট চলছে এবং পাকিস্তান থেকে আসছে করাচির বিস্ফোরণের ভয়াবহ খবর। অন্যদিকে ভারতের ৩২টি বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আকাশে আলো ঝলকানি, ভোররাতে বিস্ফোরণের শব্দ—এই মুহূর্তে দুই দেশের মানুষের মনে আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা, দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে আক্রমণের অভিযোগ তুলছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, দুই দেশের এধরনের সংঘর্ষ এবার হয়তো সীমান্ত পেরিয়ে পুরোপুরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো—এই দুই দেশের হাতেই রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। ভারতের প্রায় ১৬০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তথ্য, আর পাকিস্তানের রয়েছে ১৭০টির মতো—যেগুলোর অনেকগুলোই কম দূরত্বের যুদ্ধক্ষেত্র-ভিত্তিক ব্যবহার উপযোগী। অর্থাৎ, যদি এই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে পুরো দক্ষিণ এশিয়াই ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। তাই প্রশ্ন উঠছে—এই সংঘাত কি এখন পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে মোড় নিচ্ছে? দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরি সম্পর্ক থাকলেও বর্তমান সময়ের মতো সামরিক উত্তেজনা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি।
আন্তর্জাতিক মহল উদ্বিগ্ন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন শক্তিধর দেশ ইতোমধ্যে দুই পক্ষকে সংযত হতে বলেছে, তবে বাস্তবতা হলো, মাঠে এখন গোলা, গুলি আর ক্ষেপণাস্ত্রের লড়াই চলছে। আর সেই লড়াইয়ের মাঝে পড়ে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ, যারা শুধু চায় শান্তি আর স্বাভাবিক জীবন। এই মুহূর্তে পুরো উপমহাদেশ যেন একটা বিস্ফোরণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে—যেখানে একটা ভুল সিদ্ধান্ত কিংবা উত্তেজনাবশত নেওয়া একটা পদক্ষেপ লাখো মানুষের জীবন অনিশ্চয়তায় ফেলতে পারে।