মোহাম্মদ নিলয়
ক্রীড়া প্রতিবেদকঃ
তামিম ইকবাল নামটি শুধু একটি ক্রিকেটারের নয়, এটি একটি আবেগ, একটি সময় এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক অধ্যায়ের প্রতিচ্ছবি। দেশের ক্রিকেটে এক যুগের বেশি সময় ধরে যে কজন খেলোয়াড় মাঠে নৈপুণ্য দেখিয়ে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে, তামিম তাদের শীর্ষে। ডাউন দ্যা উইকেটে এসে বাউন্ডারি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা পেয়েছেন ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই। বিশ্বের নামিদামী সব বোলারদের একের পর এক চার ছক্কা হাঁকিয়ে বনে যান দেশ সেরা ওপেনার। যদিও ক্যারিয়ারের নানা সময়ে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছিলো বহুবার। সম্প্রতি আবারও সমালোচনায় এসছেন ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানানো এই ক্রিকেটার। এবার তিনি আলোচনায় ক্রিকেট নয় রাজনীতি নিয়ে। সম্প্রতি বিএনপির এক জনসভায় তাকে অতিথি হিসেবে দেখা যাওয়ার পর থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে, তামিম কি তাহলে এবার রাজনীতির ময়দানে নাম লেখিয়েছেন? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, তামিম কি বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন?
তার উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে সমর্থকদের মধ্যে। কেউ বলছেন, এটা নিছকই সামাজিক সৌজন্যবোধ, আবার কেউ বলছেন, এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক পরিকল্পনা। তামিম অবশ্য এখনো সরাসরি কিছু বলেননি। তবে জনসভায় তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে কিছুটা রাজনৈতিক ভাবার্থ প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি স্টেজে তামিমেরর সাথে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আন্তরিক আচরণ দেখে কিছুটা অনুমেয় বিষয়টি। তার চেয়েও বড় বিষয় তামিমের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই ভালো বলে জানা যায়, বিশেষ করে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত পরিচয় বহুদিনের। ক্রিকেটের বাইরের জগতে তামিম বরাবরই মিডিয়ার আলো থেকে দূরে থেকেছেন, কিন্তু রাজনীতিতে আসা মানেই তো আলো আর সমালোচনার মুখোমুখি হওয়া। প্রশ্ন হলো, যে তামিম জাতীয় দলের হয়ে বারবার মাঠে নেমেছেন দেশের পতাকা বুকে নিয়ে, সেই তামিম যদি একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কথা বলেন, তবে তার সেই অবস্থান কতটা গ্রহণযোগ্য হবে দেশের মানুষের কাছে?
আবার এটাও ঠিক, বহু ক্রিকেটারই রাজনীতিতে এসেছেন, যেমন ভারতের গৌতম গম্ভীর, পাকিস্তানের ইমরান খান, শ্রীলঙ্কার সনথ জয়সুরিয়া—তাদের অনেকে জনপ্রতিনিধিও হয়েছেন। এমনকি দেশের দুই কিংবদন্তি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং মাশরাফি বিন মর্তুজাও যোগ দিয়েছিলেন রাজনীতিতে। যদিও তামিমের সাথে তাদের বিস্তর ফারাক রয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট থেকেই অফিসিয়ালি বিদায় নিয়েছেন তামিম তাই তার রাজনিতিতে যোগদান কোন ধরণের কনফ্লিক্ট এন্ড ইন্টারেস্ট খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবসরের পর যে কোন মতাদর্শেই একজন ক্রিকেটার নিজেকে যুক্ত করতেই পারেন।
ছাত্রদলের জনসভায় তামিমের উপস্থিতি নিয়ে জনমনে যে প্রশ্নের উদয় ঘটেছে তাহলো, তামিম কোন উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপির মঞ্চে উঠেছেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি হতে পারে বিএনপির তরফ থেকে একটি ‘সিগন্যাল’, যে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে পরিচিত মুখ বা তারকাদের সামনে আনতে চায়। তামিমকে সামনে এনে তারা তারুণ্যের সমর্থন টানতে চায়। আবার তামিমের দিক থেকেও এটি হতে পারে তার নিজস্ব পরিচিতি কাজে লাগিয়ে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করার প্রস্তুতি। তবে সব কিছুই এখন অনুমান পর্যায়ে। তামিম এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি, বিএনপিও বলেনি তিনি যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু রাজনীতি তো এমনই—যেখানে কিছু না বললেই সবচেয়ে বেশি কিছু বোঝা যায়। এই মুহূর্তে যদি তামিম সত্যিই রাজনীতিতে যোগ দেন, তবে তা হবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য বড় এক ঘটনা। আবার অনেক ভক্ত হয়তো হতাশ হবেন, কারণ তারা চায় না তাদের প্রিয় ক্রিকেটার রাজনীতির কাদা ঘেঁষে যান। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত—তামিমের রাজনীতি নিয়ে মানুষের আগ্রহ আর আলোচনার পরিমাণ প্রমাণ করে, তিনি এখনো কতটা প্রভাবশালী, মাঠের বাইরে থেকেও। শেষ পর্যন্ত তিনি বিএনপিতে যোগ দেন কি না, সেটি সময়ই বলে দেবে, কিন্তু তামিম ইকবাল যে দেশ সেরা ওপেনার সেটি নিসন্দেহ এক বাক্য মেনে নিতে হবে সকলকেই।