পোশাক শিল্পকে যদি দেশের বর্তমান অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি বলা হয়, তাহলে সেটি একেবারেই ভুল হবে না। আশির দশকের গোড়ার দিকে স্বল্প পরিসরে একটি অপ্রচলিত রফতানি খাত হিসেবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়ে তা আজ রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশে পরিণত হয়েছে। শ্রম সহজলভ্য হওয়ায় বাংলাদেশে খুব দ্রুতই জনাপ্রিয় হয়ে ওঠে পোশাক শিল্প।
একদিকে যেমন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে চলেছে, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই নারী। বর্তমানে দেশের প্রায় ৫ কোটি লোক জীবন-জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ্ভাবে এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান এবং তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়েছে এ খাতটি।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান রফতানি বাজারগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসব বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা ক্রমবর্ধমান। বিশ্বের প্রধান তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ চীনের প্রভাবও ক্রমাগতভাবে লাঘব হচ্ছে বিশ্ব বাজারে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দক্ষতা, দেশীয় পোশাকের মান, শিল্পের পরিবেশ উন্নতকরণ ও ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈশ্বিক পোশাক শিল্পের বাজার দ্রুত গতিতে বাংলাদেশ নির্ভর হয়ে পড়ছে।
তবে দেশের চলমান অস্থিতিশীল অবস্থা পোশাক রফতানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দেশের পোশাক শিল্পের অন্যতম শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই বেতন বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করছেন পোশাক শ্রমিকরা। এতে আশুলিয়ায় অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে করে একদিকে যেমন উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে তেমনি কর্মহীন হয়ে পড়েছে অগণিত শ্রমিক।
এই বিষয়ে রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সাধারণ সভা শেষে বিজিএমইএ সভাপতি জানিয়েছেন দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। এখনো বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ চলছে। অনেকে আবার ভাবছেন প্রতিবেশী দেশের ইন্ধনে দেশের পোশাক খাতে এই অস্থিরতার উদ্ভব হয়েছে।
তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং দেশের প্রধান এই রাপ্তানি খাতকে বাঁচাতে সরকার ও এই শিল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এখনই সমন্বিত একটি সিদ্ধান্তে এসে বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা গুলোতে আবার কর্মতৎপড়তা শুরু করা উচিৎ।