বিডিএন৭১ ডেস্ক: ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুপুরে সোয়া দুইটায় অবতরণ করেন এই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আজকে আমাদের গৌরবের দিন। যে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজকে নতুন বিজয় দিবস সৃষ্টি করলো। সেটাকে আরও মজবুত করে সামনে রেখে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। যারা এটি সম্ভব করেছে আমি সেই তরুণসমাজকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা এ দেশকে রক্ষা করেছে এবং এ দেশকে পুনর্জন্ম দিয়েছে। পুনর্জন্মে যে বাংলাদেশ পেয়েছি সেটি যাতে দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে সেটি আমাদের কাম্য এবং সেটা আমরা রক্ষা করতে চাই।”
এ সময়, আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে ইউনূস বলেন, “আবু সাঈদের ছবি প্রতিটি মানুষের অন্তরে গেঁথে আছে। তাকে কেউ ভুলতে পারবে না। কী অবিশ্বাস্য এক সাহসী যুবক! সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর থেকেই যুবক-যুবতীরা সামনে এগিয়ে আসায় সারা বাংলাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে এবং বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীনতা আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে এবং এর সুফল সকলের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। নইলে এই স্বাধীনতার কোনো দাম থাকবে না। বাংলাদেশের মানুষ যাতে জানে যে এই স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে ব্যক্তির পরিবর্তন, পরিবারের পরিবর্তন, তার সন্তানদের পরিবর্তন।”
তরুণসমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমরা এদেশকে স্বাধীন করেছো এবং এ দেশকে তোমরা তোমাদের মনের মত করে গড়ে তুলতে পারবে। তোমাদের দেখে সারা দুনিয়া শিখবে কিভাবে একটি দেশ তরুণ সমাজ নিগ্রহণ করতে পারে এবং পাল্টে ফেলতে পারে। আমি উপদেশ দিয়ে সবসময়ই বলি তাদের বাদ দিতে হবে, তাদের পুরনো চিন্তা দিয়ে দেশ এগিয়ে নেয়া সম্ভব না। শুধু বাংলাদেশ না পুরো বিশ্বই।তোমাদের মাঝে যে শক্তি আছে এবং সৃজনশীলতা রয়েছে সেই সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে হবে।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বের বিষয়ে ইউনূস যোগ করেন, “মানুষ সরকারকে দমন-পীড়নের একটি যন্ত্র মনে করে। কিন্তু এই (অন্তর্বর্তীকালীন) সরকারকে দেখে মানুষের বুক ফুলে উঠবে যে আমাকে সাহায্য করবে, রক্ষা করবে, আমার জন্য দাঁড়াবে। তাহলে মানুষের আস্থা থাকবে। জনগণ যেন মনে করে বাংলাদেশ— আমরা একটি পরিবার। এই পরিবার নিয়েই আমরা একসাথে চলতে চাই।”
দেশের অবনত হওয়া আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতিকে ‘ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “দেশে এখন আইনশৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটছে। মানুষ মানুষকে আক্রমণ করে ঘরবাড়ি ও সম্পদ জ্বালিয়ে দিচ্ছে, হরিলুট করছে, অফিস-আদালতে আগুন দিচ্ছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করছে।এগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ। আমাদের কাজ হলো এগুলো থেকে সবাইকে রক্ষা করা। প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই, আমাদের বোন। আমাদের শৃঙ্খলায় ফিরে আসতে হবে। বিশৃঙ্খলা সহিংসতা এগুলো হলো অগ্রগতির বড় শত্রু। ছাত্ররা আমার প্রতি আস্থা রেখে আমাকে আহ্বান জানিয়েছে, আমি সাড়া দিয়েছি।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত নয়টায় বঙ্গভবনে শপথ নেবেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৭ সদস্য।