রাবি প্রতিনিধি: লোডশেডিং, শব্দদূষণ ও প্রয়োজনীয় বইয়ের সংকট ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। সমাধানের আশ্বাস দিলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন গিয়ে ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রন্থাগারে পর্যাপ্ত পরিমাণে বই নেই। তাছাড়াও ক্যারিয়ার ও চাকরি সংক্রান্ত বই কম এমনকি অনেক বই পুরোনো হয়ে ছেঁড়া-ফাটা হয়ে গেছে । কিছু বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠা নেই, নতুন বইয়ের সংখ্যা কম। এসির ব্যবস্থা নেই, রয়েছে ফ্যানের সংকট। ফ্যানের বিকট শব্দে পড়ার পরিবেশ নষ্ট করছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও আলোর স্বল্পতা, কাঙ্ক্ষিত বই পেতে অধিক সময় নষ্ট, প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের চাহিদা অনুযায়ী যথা সংখ্যক বই নেই, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত লাইব্রেরি বন্ধ থাকে, লোডশেডিং হলে অটোমেটিক জেনারেটেরের ব্যবস্থা নেই এবং কর্মকর্তারা উচ্চ আওয়াজে কথাবার্তা বলেন।
এবিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈমা জান্নাতের সাথে । তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যাপিঠ। এখানে একটি গ্রন্থাগার থাকলেও পড়ার পরিবেশ খুব একটা ভালো না। বিশেষ করে এই গ্রীষ্মকালেতো একেবারেই নাই। না আছে কোনো এসির ব্যবস্থা, না আছে ভালো কোনো ফ্যান। লাইব্রেরিতে এসির ব্যবস্থা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। অল্প যেই ফ্যানগুলো আছে, সেগুলোতে আবার বিকট শব্দ হয়। পড়তে বসলে এ আওয়াজটা মাথায় ধরে। পড়াশোনায় মনোযোগ আসে না। সপ্তাহে ৫ দিনই আমাদের ক্লাস থাকে। শনিবার লাইব্রেরি খোলা থাকলেও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বন্ধ থাকে। শুক্রবারে ফ্রি থাকলেও সকালে লাইব্রেরিতে যেতে পারি না। আমার মনে হয় শুক্রবার সকালেও লাইব্রেরি খোলা রাখা উচিত।
একাডেমিক বইয়ের স্বল্পতার অভিযোগ করে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক হীরা বলেন, লাইব্রেরিতে সাইন্সের বই খুবই কম। আমরা আপডেট কোনো বই পাই না। যার ফলে লাইব্রেরিতে ভালো কোনো বই পড়তে পারি না। আর ফ্যানের অতিরিক্ত আওয়াজ তো আছেই। আমি মনে করি প্রশাসন এ বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্বের সাথে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি প্রশাসক ড. মোহাম্মদ হাবিবুল ইসলাম বলেন, সেন্ট্রাল এসিটা ১৪-১৫ বছর ধরে অকার্যকর হয়ে আছে। ১৪-১৫ বছর ধরে যারা প্রশাসক ছিলেন তারা কেউ কিছু করেনি। আমরা এসে খুব দ্রুত কাজ শুরু করি। এক মাসের ভিতরেই এসি টেন্ডারে চলে যাবে। আশা করছি এই গ্রীষ্মেই এসিটা ঠিক হয়ে যাবে। এটা হলে গরমের সমস্যাটাও সমাধান হয়ে যাবে।
বইয়ের স্বল্পতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবকিছুই আসলে বাজেটের উপর নির্ভরশীল। সারা বছরে মাত্র ২০ লক্ষ টাকার বই কেনা হয়। সাইন্স ফ্যাকাল্টির কোন কোন একটি বইয়ের দামই ৫-৬ লাখ টাকা। একটি বই কিনতে যদি ৫-৬ লাখ টাকা লাগে, তাহলে সকল ডিপার্টমেন্টের বই কেমনে কেনা সম্ভব!অনেকদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট। নতুন বাংলাদেশ হয়েছে। আশা করি সরকার এখন বাজেট বেশি দিবে এবং সকল সমস্যার সমাধান হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, আজকেই মাননীয় উপাচার্যের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে লাইব্রেরী সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেছেন। লাইব্রেরীর যেই প্রশাসক আছেন, আমরা তার সাথে বসে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলব এবং কোনো ধরনের গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখব। লেখাপড়ার জন্য শব্দহীন, সুষ্ঠু একটি পরিবেশ দরকার। কর্মকর্তা কর্মচারীরা যদি নিজেদের মধ্যে গল্প গুজব করে, তাহলে বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক।