নোয়াখালীতে গত ছয়দিন ধরে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যদিও পানি ধীরে ধীরে কমছে, বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষ এখনও সেখানে অবস্থান করছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে মাত্র ১০% মানুষ বাড়ি ফিরতে পেরেছেন, বাকি ৯০% এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। এদিকে, বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, “ডায়রিয়া ও চর্ম রোগের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুজন মারা গেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “ডায়রিয়ার প্রকোপ যাতে মহামারি আকারে না ছড়িয়ে পড়ে, সেজন্য আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় ২ লাখ ৬০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং খাবার স্যালাইন সরবরাহ করেছি। চর্মরোগের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবায় ১২৪টি সরকারি ও ১৬টি বেসরকারি মেডিকেল টিম কাজ করছে।”
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ও জেলা সিভিল সার্জন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৪২ জন ডায়রিয়া ও ২৮ জন সাপের কামড়ের রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ৩০৫ জন ডায়রিয়া ও ২৫ জন সাপের কামড়ের রোগী এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৩৭ জন ডায়রিয়া ও ৩ জন সাপের কামড়ের রোগী ভর্তি রয়েছেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল জানিয়েছেন, “গতকাল (সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত) জেলায় ৯ সেমি পানি কমেছে, তবে গতরাতে কিছুটা পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।”
বন্যাকবলিত আটটি উপজেলা ও সাতটি পৌরসভার মধ্যে বেগমগঞ্জ, সদর, সেনবাগ, চাটখিল, সোনাইমুড়ী ও কবিরহাট উপজেলার অধিকাংশ সড়ক এখনও হাঁটুর নিচে বা হাঁটু সমান পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বেশিরভাগ বসতঘর এখনও পানিতে ডুবে আছে। বন্যার পানি নামার গতি দেখে, স্থানীয়রা মনে করছেন যে আরও এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগতে পারে।
আজ মঙ্গলবার জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান খান জানান, “জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ১৭ লাখ ৯ হাজার ৩০০ জন পানিবন্দী এবং ১ হাজার ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪১ জন মানুষ অবস্থান করছেন। গত পাঁচ দিনে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ কমেছে, আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ৩৪৭টি এবং আশ্রিতদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার কমেছে। ভয়াবহ বন্যা, বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে ও ডায়রিয়ায় মোট ১১ জন মারা গিয়েছেন।”
টানা ১৫ দিন আশ্রয়কেন্দ্র ও পানিবন্দী মানুষের ত্রাণ সহায়তা দিতে প্রশাসন ও বেসরকারি সংস্থাগুলো হিমসিম খেতে হচ্ছে। গত দুই দিনে সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সামগ্রী কমে যাওয়ায় প্রশাসন বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণে সমস্যা অনুভব করছে। বর্তমানে বন্যার্তদের জন্য ৩০ লাখ টাকা, সাড়ে ৮১ মে.টন চাল, ১০ হাজার শিশু খাদ্য ও গো-খাদ্য মজুদ রয়েছে।