তিন বছর আগে মার্কিন সেনাদের সরিয়ে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখল করলে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হয়েছিল। ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিলে পাকিস্তানের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমদ বিজয় উদযাপন করে সীমান্তে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেই সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তালেবানের উত্থানকে আফগান জনগণের “দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙার” সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আফগান তালেবান একটি সুসংগঠিত বিদ্রোহ পরিচালনা করেছে। পাকিস্তানের মাটিতে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে, তালেবানদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তোলা হয়। কোয়েটা, পেশোয়ার, এমনকি করাচির মতো শহরেও তালেবানরা প্রভাব বিস্তার করে। অনেক তালেবান নেতা পাকিস্তানের বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন, যার মধ্যে অন্যতম দারুল উলুম হাক্কানিয়া।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান-তালেবান সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। চলতি বছরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই দফা আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালায়, যা দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে। তালেবান সরকারের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রত্যাশিত সহযোগিতার অভাব স্পষ্ট হচ্ছে। তারা জাতীয়তাবাদী অবস্থান শক্তিশালী করে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে।
ডুরান্ড লাইন ও সীমান্ত সমস্যাঃ
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে ঔপনিবেশিক আমলের ডুরান্ড লাইন নিয়ে বিরোধ পুরোনো। বর্তমান তালেবান সরকারও এই সীমারেখাকে স্বীকৃতি দেয়নি, যা পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত অসুবিধার সৃষ্টি করছে।
টিটিপি ও নিরাপত্তা সংকট:
২০২২ সাল থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পেছনে তালেবান সংশ্লিষ্ট তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। আফগান তালেবান ও টিটিপির দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে।
সমাধানের পথ:
উভয় দেশের নেতাদের দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য কৌশলী পদক্ষেপ নিতে হবে। পাকিস্তানের সামরিক অভিযান তালেবান সরকারের সীমিত সামর্থ্যের ওপর চাপ তৈরি করলেও আফগান জনগণের মধ্যে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব বাড়াতে পারে। দুই দেশের নেতৃত্বের অভাবে অঞ্চলটির ৩০ কোটি মানুষের সম্ভাবনা ব্যাহত হচ্ছে। শান্তি অর্জনে ধৈর্য ও কৌশলের বিকল্প নেই।
আরএস//বিএন