সম্প্রতি রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বে থেকে নিজ ছেলেকে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া। নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্যের ছেলের নাম হামিম আল রশীদ। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির মেরিন, ফিশারিজ এন্ড ওশানোলজি বিভাগে কর্মরত আছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২০১০ সালে উপাচার্যের বড় পুত্র আসাদুল্লাহ হিল কাফি এবং ২০১৩ সালে আপন ভাগ্নি সাজিয়া আফরিন নিয়োগ পান। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সেকশন অফিসার পদে ০৭ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। সেই নিয়োগ বাছাই বোর্ডে উপাচার্য সভাপতির দায়িত্বে থেকে নিজ ছোট ছেলে হামিম আল রশীদ কে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেন। এর মাধ্যমে শেকৃবি উপাচার্য আত্মীয়করণ, সেচ্ছাচারিতা ও সরকারি নিয়োগ বিধি লঙ্ঘনের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন এর সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগ) অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেন, “পুত্র প্রার্থী হিসেবে আবেদন করা সত্ত্বেও উপাচার্যের নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সভাপতির পদে থাকা ঠিক হয়নি। নিকটস্থ আত্নীয় প্রার্থী থাকলে নিয়োগ বাছাই বোর্ডে থাকা উচিত নয়, এটা উনি ( উপাচার্য) ঠিক করেননি।” পিতার সভাপতিত্বে পুত্রের চাকুরীর বিষয়ে জানতে চাইলে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্র জানায়, সরকারি নিয়োগবিধি অনুযায়ী নিয়োগ বাছাই বোর্ডের কোন সদস্যের নিকটস্থ আত্মীয় উক্ত বাছাই বোর্ডে প্রার্থী হিসেবে আবেদন করলে সেই বাছাই বোর্ডে সদস্য হিসেবে তাহার থাকার কোন সুযোগ নেই। এই ক্ষেত্রে উক্ত বাছাই বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে থেকে কারোর নিকট আত্মীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদন করলে তিনি পূর্বেই এই সম্পর্কিত তথ্য ঘোষণা করে উক্ত নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সকল প্রক্রিয়া থেকে সরে যাবেন।
উপাচার্যের সভাপতি থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেন,”সেকশন অফিসার পদে উপাচার্য বাছাই বোর্ডের সভাপতি হিসেবে ছিলেন। কিন্তু তার ছেলের পরীক্ষার দিন তিনি সভাপতি ছিলেন না। ওই দিন সভাপতি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলক কুমার পাল।”
বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন , পুরো সেকশন অফিসার পদে ভাইভা নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ছিলেন উপাচার্য। উপাচার্যের নির্দেশনা অনুযায়ী এই পদে সিলেকশন করা হয়েছে।
ছেলে হামীমের নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন,”ওর নিয়োগ বোর্ডে আমি ছিলাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সেখানে ছিলেন। কাজেই স্বজনপ্রীতির অভিযোগগুলো মিথ্যা। তিনি আরও বলেন, যারা ভিসি হতে চায় ও যারা আমার কারণে অনিয়ম-দুর্নীতি করতে পারেনি তারাই এসব বলে বেড়াচ্ছে, এগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।”
গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) উপাচার্যের নিয়োগ, টেন্ডার, একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং আর্থিক ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রাপ্ত অভিযোগ সমূহের দফাওয়ারি বক্তব্য ০৫ কর্মদিবসের মধ্যে কমিশনে প্রেরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পত্র পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। উল্লেখ্য যে, ইউজিসির কাছে পাঠানো অভিযোগপত্রে পিতার সভাপতিত্বে পুত্রের চাকরি বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে ।