পাখি পছন্দ করে না বা পাখির রূপ দেখে মুগ্ধ হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। পৃথিবীতে প্রায় দশ হাজারেরও বেশি প্রজাতির পাখির খোঁজ মিলেছে এখন পর্যন্ত। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের পাখি আছে যাদের দৈহিক গঠন, দৈহিক রং এবং অসাধারণ কিছু গুণের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরতম পাখি হিসেবে তারা স্বীকৃতি পায়। এই রকম ৫টি পাখির ব্যাখ্যা নিচে দেয়া হলোঃ
- গোল্ডেন ফিজ্যান্ট বা সোনালি মথুরা
গোল্ডেন ফিজ্যান্ট, বৈজ্ঞানিক নাম Chrysolophus pictus। এটি একটি রঙিন এবং চমৎকার পাখি যা চীন এবং এশিয়ার কিছু অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি চীনা ফিজ্যান্ট বা রেইনবো ফিজ্যান্ট নামেও পরিচিত। গোল্ডেন ফিজ্যান্টদের সুন্দর এবং উজ্জ্বল রঙের পালকের জন্য বিখ্যাত। গোল্ডেন ফিজ্যান্টের মাথায় ক্রেস্টের মতো দুর্দান্ত গোল্ডেন ফার্ন-সহ একটি প্রাণবন্ত লালচে-কমলা ঘাড় রয়েছে। প্রধানত পশ্চিম চিনের ঘন বনাঞ্চলে দেখা যায় এদের। পাখিটি প্রায় ৯০-১০৫ সেমি পর্যন্ত বড় হয় এবং লেজের দৈর্ঘ্য পাখির আকারের দুই-তৃতীয়াংশ। পুরুষ পাখিগুলির ওজন ১.৪ কেজি মতো হয়, এবং স্ত্রী পাখিদের ওজন ১.২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি স্ত্রী গোল্ডেন ফিজ্যান্ট প্রতি মৌসুমে ৪০টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে পারে।
- স্কারলেট ম্যাকাও
স্কারলেট ম্যাকাও, Scarlet Macaw একটি বড় এবং উজ্জ্বল রঙের টিয়া পাখি, যার বৈজ্ঞানিক নাম Ara macao। এটি দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকার উষ্ণমণ্ডলীয় অরণ্যে পাওয়া যায় এবং তার রঙিন পালকের জন্য বিখ্যাত। স্কারলেট ম্যাকাওগুলি তাদের স্মার্টনেস এবং দীর্ঘায়ু জীবনকালেও পরিচিত। এরা ম্যাকাও প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম ও সুন্দরতম সদস্য। উজ্জ্বল লাল, নীল ও হলুদ রঙের সমাহারে স্কারলেট ম্যাকাওয়ের মোহনীয় রূপ সকলকেই মুগ্ধ করে। সেইসঙ্গে এর উপরের দিকের হলুদ ডানার শেষাংশে সবুজ রঙেরও বেশ সুন্দর একটা প্রলেপ রয়েছে। শক্তিশালী বাঁকা ঠোঁট, দীর্ঘতম সময় উড়তে পারার ক্ষমতাও এদের আলাদা করে চিনিয়ে দেয়। কোইয়া দ্বীপে রয়েছে বহু স্কারলেট ম্যাকাও। হন্ডুরাস এই পাখিটিকে জাতীয় পাখি ঘোষণা করেছে। স্কারলেট ম্যাকাও বাঁচে প্রায় ৪০-৪৫ বছরের মতো। বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান পাখি বলা হয় এদের, মানুষের কণ্ঠস্বর হুবহু নকল করতে পারে এরা।
- ফ্ল্যামিংগো
ফ্ল্যামিংগো, Flamingo হল দীর্ঘ, সরু পায়ের এবং দীর্ঘ গলা সহ একটি বড় পাখি, যা তার গোলাপি বা লালচে পালকের জন্য বিখ্যাত। এই পাখিদের বৈজ্ঞানিক নাম Phoenicopteridae। তাদের বিভিন্ন প্রজাতি বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। আন্টার্কটিকা ছাড়া প্রায় সব দেশেই দেখতে পাওয়া যায় ফ্ল্যামিংগো। পাখিটি মুগ্ধ করে তার কমলা সৌন্দর্য্যে। ফ্ল্যামিংগো নামটি পর্তুগিজ বা স্প্যানিশ শব্দ ‘ফ্লামেঙ্গো’ থেকে এসেছে, যার অর্থ বর্ণযুক্ত শিখা। ফ্ল্যামিংগোর শরীরে শিখার মতো স্তর দেখা যায়। তারা দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম, এবং প্রতি ঘন্টায় ৫৬ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে। ফ্ল্যামিংগোকে ‘ওয়েডিং বার্ড’ও বলা হয়। তারা সাঁতার কাটতেও অত্যন্ত দক্ষ। পৃথিবীতে প্রায় ৬ প্রজাতির ফ্ল্যামিংগো রয়েছে। পূর্ণবয়স্ক ফ্ল্যামিংগো ৪-৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং প্রায় সাড়ে তিন কেজি ওজন পর্যন্ত হতে পারে। তাদের দীর্ঘ গলা ও পা কাদা থেকে ছোট মাছ ও প্ল্যাঙ্কটন খেতে সাহায্য করে।
- ময়ূর
ময়ূরকে ইংরেজিতে Peafowl বলা হয়, এক ধরনের বড় পাখি যা তার সুন্দর এবং রঙিন পুচ্ছ পালকের জন্য বিখ্যাত। বিশেষত পুরুষ ময়ূরকে পিকক (Peacock) বলা হয়, এবং তাদের উজ্জ্বল রঙের এবং সুন্দর পুচ্ছ পালকের জন্য তারা বিখ্যাত। ময়ূরদের স্ত্রীকে পিহেন (Peahen) বলা হয়, এবং তাদের পালক সাধারণত কম উজ্জ্বল হয়। ময়ূরদের বৈজ্ঞানিক নাম Pavo cristatus, এবং তারা ফাসিয়ানিডি (Phasianidae) পরিবারে অন্তর্ভুক্ত। ময়ূরকে বলা হয় বর্ষার রাণী। এই সময় স্ত্রী ময়ূরের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নয়নাভিরাম পেখম মেলে ধরে পুরুষ ময়ূর। এতে বিশেষ দুর্বলতা তৈরি হয় এবং তখনই আকর্ষণীয় নাচ যে পুরুষ ময়ূর দেখাতে পারে, তাকেই সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয় স্ত্রী ময়ূর। ফ্যাজিয়ানিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত অত্যন্ত সুন্দর একটি পাখি হল ময়ূর। এশিয়ায় মূলত নীল ও সবুজ- দুই প্রজাতির ময়ূরের দেখা মেলে। তবে মাঝে মধ্যে জিনগত কারণে সাদা ময়ূরের দেখা পাওয়া যায়। ময়ূর সর্বভুক পাখি। এরা মুরগির মতো ডিম পাড়ে, ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এরা মাটির গর্তে বাস করে ও গাছে বিশ্রাম নেয়। তারা শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য তাদের পায়ের নখ ব্যবহার করে।
- ব্লু জে
ব্লু জে, Blue Jay একটি উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয় পাখি, যার বৈজ্ঞানিক নাম Cyanocitta cristata। এটি কোরভিডি পরিবারভুক্ত এবং উত্তর আমেরিকায় বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার বনাঞ্চলে সাধারণত দেখা যায়। ব্লু জে তাদের উজ্জ্বল নীল রঙ এবং স্মার্ট আচরণের জন্য বিখ্যাত। এরা সাধারণত নীল, সাদা ও কালো রঙের সমাহারে সাজানো হয়, যা এদের সৌন্দর্য্যের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। সাধারণত দুষ্ট স্বভাবেপ হওয়ায় এবং শরীরে নীল রঙের প্রভাব বেশি থাকায় এদের নামকরণ হয়েছে ব্লু জে হিসেবে। এমনকী ডাকের সময়ও এরা জে জে বলেই ডাকাডাকি করে। মোহনীয় চেহারা ছাড়াও এই পাখিটির নিজের বুদ্ধিমত্তার জন্যও বিশেষ সুনাম রয়েছে। অন্য পাখিদের ডাক অনুকরণের এক অনন্য ক্ষমতা এদের রয়েছে, যা অন্য পাখিদের বিব্রত করে দেয় মাঝেমধ্যে। অন্য পাখির ডিম ও বাসাও চুরি করে এরা। অন্য পাখিদের ভয় দেখাতে ঈগলের ডাক হুবহু নকল করতেও এদের নাম রয়েছে।