রাবি প্রতিনিধি:
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’র (রাকসু) ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে ব্যার্থ হয়েছে বর্তমান প্রশাসন। নির্বাচন কমিশনের অবহেলাকে প্রধান কারণ বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দাবি ঘোষিত রোডম্যাপ চূড়ান্ত নয়, ফলে জুনে রাকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কার তৈরি হয়েছে।
চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পথনকশা অনুযায়ী ১৩ এপ্রিল রাকসু বিধিমালা এবং নির্বাচনের আচরণবিধি চূড়ান্তকরণ ও প্রকাশ, ২৮ এপ্রিল খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ, ৩০ এপ্রিল ভোটার তালিকা সম্পর্কে আপত্তি, ১৩মে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করার কথা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খসড়া ভোটার তালিকাই প্রকাশ করতে পারেনি।
পথনকশা অনুযায়ী, ভোটার তালিকা প্রকাশের পর ১৫মে মনোয়নপত্র বিতরণ, ১৯মে মনোনয়নপত্র দাখিল, ২০মে মনোনয়নপত্র নিরীক্ষা ও বাছাই, ২২মে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ২৫মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং ২৭মে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিলো।
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর চলতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে ভোটগ্রহণের কথা বলা হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছে, রাকসু নিয়ে বর্তমান প্রশাসন যে গতিতে এগুচ্ছে, মনে হচ্ছে তাদের পিছনে অদৃশ্য কেউ হস্তক্ষেপ করছে এবং কোনো রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে। ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করতে এই প্রশাসন ব্যার্থ হচ্ছে। বর্তমান প্রশাসন একটা উদ্ভব উটের পিছনে চলছে। এখানে কেউ কাউরে নিয়ন্ত্রণ করতেছে না। এভাবে চলতে থাকলে জুনে রাকসু নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি করছে। প্রশাসনের সবাই এর জন্য দায়ী না হলেও প্রশাসন যেহেতু সবাইকে নিয়েই কাজ করে সেহেতু প্রশাসনকে অবশ্যই এর দায় নিতে হবে। এখনো অনেক সময় আছে, প্রশাসনের সবাই চাইলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রাকসু বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
এবিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, রাকসু নির্বাচনের যে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে তার কোনোটাই এই প্রশাসন পরিপূর্ণ করতে পারেনি। উপাচার্য শুধু আশ্বাসই দিয়ে যাচ্ছে। আজ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা একসাথে একটা মিটিংই করতে পারেনি।
তিনি বলেন, প্রশাসন একটা উদ্ভব উটের পিছনে চলছে। এখানে কেউ কাউরে নিয়ন্ত্রণ করতেছে না।নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও হল প্রাধ্যক্ষরাও রাকসু নির্বাচন নিয়ে অবহেলা দেখাচ্ছে। উপাচার্য থেকে আদেশ আসলেও তাঁরা কোনো সাড়া প্রদান করেনা। এভাবে চলতে থাকলে আদোও রাকসু নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব আল শাহরিয়া শুভ বলেন, এই প্রশাসন কারও উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে। রাকসুর তারিখ ঘোষণা থেকে শুরু করে কোনো রোডম্যাপই এই প্রশাসন অনুসরণ করতেছেনা। সবকিছুই যদি আন্দোলন করে আদায় করতে হয় তাহলে মুশকিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠন চাচ্ছে রাকসু হোক হয়তোবা এক/দুইটা রাজনৈতিক দল তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যার্থতার কারণে নাও চাইতে পারে। প্রশাসনের উচিৎ রাজনৈতিক সংগঠন কি চায় তা না দেখে সাধারণ শিক্ষার্থী কি চায় সেটা দেখা।
তিনি বলেন, রাকসু নিয়ে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের যে লালিত স্বপ্ন তা যদি এই প্রশাসন করতে না পারে, দলীয় সরকার আসলে তা কখনোই সম্ভব হবেনা। হতাশার বিষয় হলো প্রশাসনের বর্তমান কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছেনা তারা রাকসু নির্বাচন দিবে বা দিতে চায়।
স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজিব বলেন, এখানে মনে হয় অদৃশ্য কেউ হস্তক্ষেপ করতেছে। জুলাই আগস্টের বিপ্লব যে ৯টি দফার উপর ভিত্তি করে হয়েছিল তার অন্যতম একটি ছিলো প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন কার্যকর করা। রাকসু নির্বাচন নিয়ে এই প্রশাসন প্রথম দিকে যে তৎপর ছিল নির্বাচন কমিশন গঠনের পর তা অনেকটাই কমে গেছে ।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের থাকলেও গত এক মাসে তারা একটা মিটিং কার্যকর করতে পারেনি। নির্বাচনের প্রাথমিক কার্যক্রম যে কমিশন করতে পারেনা সে কমিশন আগামী জুন মাসে কিভাবে নির্বাচন আয়োজন করবে। এই কমিটি একটা অথর্ব কমিটি।
শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, অনেকদিন ধরেই শিক্ষার্থীরা রাকসু থেকে বঞ্চিত। আমরা চাই দ্রুতই রাকসু নির্বাচন হোক এবং সেটা হতে হবে নিরপেক্ষ ও সকলের অংশগ্রহণে ৷ যেখানে ভােটাধিকার থেকে শুরু করে প্রার্থীতা পর্যন্ত কোনাে বাধ্যবাধকতা থাকবে না৷ দল মত নির্বিশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী যেন প্রার্থী হতে পারে এই সকল বিষয়গুলো মাথায় রেখে এবং রাজনৈতিক যে ধারাটা, রাজনীতির নামে যারা উগ্র অন্ধ এসকল লোকদের অপসারণ করে রাকসু নির্বাচনের তফসিল ও ভােটার তালিকা এবং নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে৷
তিনি বলেন, প্রশাসনের দূর্বলতা এবং তাদের সদিচ্ছার অভাবে এখানো তারা ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। প্রশাসনের স্বদিচ্ছা থাকলে ঠিক সময়েই রাকসু বাস্তবায়ন করা সম্ভব
রাকসু কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেতাউর রহমান বলেন, জুনে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবেনা, এটা একটু হলেও পিছাবে। তার প্রধান কারণ হলো নির্বাচন কমিশনে যারা আছেন তারা এখনো একসাথে বসতে পারেনি। যে রোডম্যাপটি ঘোষণা করা হয়েছে তা একটি খসড়া রোডম্যাপ ছিল এটা যে যথার্থ পালিত হবে এমনটা নই। এটাই যদি হতো তাহলে তা মূল শিডিউলই হয়ে গেলো। মূল শিডিউল যখন হবে তখন প্রতিটি পয়েন্ট ঠিকভাবে পালন করা হবে৷
তিনি বলেন, আবাসিক হলগুলো থেকে কয়েকটি তালিকা দেওয়া হয়েছে যা অসম্পূর্ণ। এবিষয়গুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশন কয়েকজন অফিসার নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে একটা সময়সূচি প্রকাশ করবেন। নির্বাচন নিয়ে যাবতীয় সকল পরিকল্পনা ও বিষয়বস্তু নিয়ে নির্বাচন কমিশন দ্রুতই বসবে।
নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতার প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বাচন আয়োজন করার সক্ষমতার উপর ভিত্তি করেই সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে তাদের(নির্বাচন কমিশন) উপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এতই ব্যস্ত মানুষ যে তাদের ব্যস্ততার কারণে একসাথে বসতেও পারছেনা। তারা চাইলেই নির্বাচন টা আয়োজন করতে পারে হয়তোবা সময়টা একটু হেরফের হবে। আমরা আশাবাদী তারা তাদের জায়গা থেকে যথার্থ দায়িত্ব পালন করবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের সদস্যরা রাজশাহীর বাইরে থাকার কারণে বসা হচ্ছেনা। আগামী মঙ্গলবার আমাদের বসার কথা রয়েছে। মিটিং এ নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনের সাত জন কমিশনারকে একসাথে করাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সকলের সাথে বসে ভোটার তালিকা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। আগামী মঙ্গলবার তারা একত্রে বসবেন বলে জনিয়েছেন। গত ৫ মে তাদের বসার কথা ছিলো কিন্তু কারও ইউজিসিতে, কারও পিএসসিতে যাওয়ার কারণে এটা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি।
জুনে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব কিনা এবিষয়ে তিনি বলেন, এটা নির্বাচন কমিশন বলতে পারবে। আমরা তাদের একটা রোডম্যাপ ধরিয়ে দিয়েছি। সেটাকে সামনে রেখেই তারা কাজ করবেন এবং নির্বাচন তফসিলের দিকে তারা যাবেন।