বিশেষ প্রতিনিধি: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দুটি নতুন বিভাগ—রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতকৃত অধ্যাদেশ উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পেয়েছে এবং বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। শিগগিরই এটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, উভয় বিভাগের প্রধান পদসহ বিভিন্ন পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তে এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, পৃথকীকরণ সময়োপযোগী হলেও, প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য রাজস্ব আদায়ে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রাজস্ব ক্যাডারের কর্মকর্তারা চান, নতুন বিভাগগুলোর নেতৃত্বে অভিজ্ঞ রাজস্ব কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা হোক।
অধ্যাদেশের কপিতে দেখা গেছে, রাজস্ব নীতি বিভাগের প্রধান হিসেবে যেকোনো যোগ্য সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান পদেও রাজস্ব সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হলেও, আইনি মারপ্যাঁচে প্রশাসন ক্যাডারদেরই প্রাধান্য পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী জানান, প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য প্রবণতা সুস্পষ্ট। তিনি মনে করেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনভিজ্ঞ লোক নিয়োগ করলে কাজে সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হবে এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাবে না।
গত ১৩ এপ্রিল বিসিএস (ট্যাক্সেশন) ও বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে অর্থ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়ে বিভাগীয় পদগুলোতে রাজস্ব ক্যাডারদের অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানায়।
রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনার পৃথকীকরণের দাবি বহুদিনের। স্বার্থের সংঘাত এড়াতে এবং কাজের চাপ কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকও এ পৃথকীকরণকে ঋণ প্রদানের শর্ত হিসেবে রেখেছিল। যদিও সংস্কার কমিটি সর্বোচ্চ পদে রাজস্ব ক্যাডারদের নিয়োগের সুপারিশ করেছিল, পরবর্তীতে তা সংশোধন করে প্রশাসন ক্যাডারের পক্ষে সংশোধন আনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এনবিআরের সাবেক সদস্যরা সতর্ক করে বলেছেন, প্রশাসন ক্যাডারের প্রভাব রাজস্ব নীতি ও বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, কারণ তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বাস্তব জ্ঞান সীমিত। ফলে ভুল নীতির কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত ও রাজস্ব আয় কমতে পারে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ মনে করেন, পৃথকীকরণ উন্নয়নের দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও সফল বাস্তবায়নের জন্য অভিজ্ঞ রাজস্ব কর্মকর্তাদেরই নেতৃত্বে রাখা উচিত। বিশেষায়িত বিভাগ হিসেবে দক্ষতার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।