বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীমাতৃক দেশে নৌকাই ছিল আদি বাহন। এ দেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদী-নালা, খাল, বিল, হাওর-বাওর। আবহমান কাল থেকে এই জলধারায় বিভিন্ন ধরনের নৌকা বয়ে চলছে। কিন্তু দিনে দিনে এসব নদ-নদী, খাল-বিল হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ থেকে। সেই সাথে বিলুপ্ত হচ্ছে নানা রকমের নৌকাও। পাল তোলা সারি সারি নৌকার নৈসর্গিক দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না। বর্তমানে পাল তোলা নৌকারও খুব একটা দেখা পাওয়া যায় না।
নদীতে অসংখ্য পাল তোলা নৌকার সেই ঐতিহ্যবাহী মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন শুধুই ইতিহাস। আগে গ্রামের নদীর ঘাটে অসংখ্য পাল তোলা নৌকা বাঁধা থাকতো। এখন আধুনিক স্পিডবোট অনেক জায়গায় সে স্থান দখল করে নিয়েছে। এখনও নদী আমাদের জীবন-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি। কিন্তু পানি শূন্যতা আমাদের সবকিছু পানসে করে দিচ্ছে। যুগের হাওয়া বদলে গেছে। যান্ত্রিক যানবাহন হটিয়ে দিচ্ছে জীবন নির্ভর যানবাহনকে। শেকড় সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে জীবন। নদী আর নৌকা ছিল বাঙালির গ্রাম্য জীবনের বহমানতা। সভ্যতার পালে লেগেছে হাওয়া, ছুটছে মানুষ দ্রুত। কোথায় যাচ্ছে এবং কেন যাচ্ছে তা কারো জানা নেই।
নৌকা নিয়ে অনেক গানও রচিত হয়েছে। যেমন-‘পাল তোলা ওই নায়ের মাঝি/ ভাটিয়ালি গায়/ ঘোমটা পরা গায়ের বধূ/ শশুরবাড়ি যায়। ও মাঝি ভাই ও মাঝি ভাই/ কোন সে গাঁয়ে যাও/রূপগঞ্জে মামার বাড়ি আমায় নিয়ে যাও/আষাঢ় মাসে ভাসা পানি/পুবালী বাতাসে বাদাম দেইখ্যা চাইয়া থাকি/আমারনি কেউ আসে/’।
মাঝিকে গাঁয়ের বধুর এমন আকুতিও হারিয়ে গেছে। আধুনিক নগর সভ্যতার যুগে যান্ত্রিক যানবাহনের ভারে পাল তোলা নৌকা আজ স্মৃতির অতলান্তের পথে। বর্ষাকাল এলে এখন নদীতে যেটুকু সময়ে পানি থাকে, বিশেষ করে বর্ষাকালে তখন কিছু নৌকা দেখা যায়। হাতেগোনা দু’একটা চোখে পরলেও মানুষ আর আগের মতো নৌকা ব্যবহার করে না। নতুন বউ বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য নান্দনিক পাল তোলা নৌকার বায়না ধরে না।
- নৌকার ইতিকথাঃ
প্রাচীন বাংলার অন্যতম কেন্দ্র চন্দ্রকেতু গড়ের কথা আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। এই চন্দ্রকেতু গড়ে পাওয়া বেশ কিছু পোড়ামাটির সীলে নৌকার উল্লেখ আছে। আবার দুটো নৌকার নামও পাওয়া গেছে সেখানে। একটা হলো ‘এপ্য’ বা এপ্পগ অন্যটা ‘জলধিসক্ল’ (জলধিশত্রু)। জলধিশত্রুটা ছিল সম্ভবত যুদ্ধ জাহাজ। খ্রিস্টাব্দের প্রথম শতকের পেরি প্লাসের বিবরণীতেও এপ্পগ নামের জলযানের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়।
কবি মুকুন্দ রায় আর চন্ডীমঙ্গলে ‘জঙ্গ’ নামের এক ধরনের বাণিজ্যিক জাহাজের কথা লিখেছিলেন। এখনও বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জামালপুর এলাকায় ‘ঝঙ্গ’ নামের এক ধরনের নৌকা দেখা যায়, যা সম্ভবত সেই প্রাচীন জঙ্গেরই উত্তরসূরি। পনের শতকের শেষের দিকের কবি বিপ্রদাস পিপলয়, মুকুন্দরায়ের বর্ণনায় বর্ণাঢ্য নাম আর বিবরণে সব নৌকা উঠে এসেছে মাঝে মাঝে। কি দারুণ সব নাম ছিল- মধুকর, সর্বজয়া, সুমঙ্গল, চিত্ররেখা, দূর্গাবর, গুয়ারেখি, নবরত্ন, শঙ্খচূড় আরও অনেক কিছু।
সে সময়ে নৌকা বানানো হতো কাঁঠাল, পিয়াল, তাল, শাল, গাম্ভারি, তমাল প্রভৃতি কাঠ দিয়ে। মুসলমান শাসকদের আগমনের পরে বাংলার নৌ-শিল্পের আরও বিকাশ হয়েছিল।
- নৌকার মাঝিঃ
কথিত আছে তখনকার দিনে মাঝিরা বাতাসের গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারতেন ঝড়ের আগাম খবর। রাতের আধাঁরে নৌকা চালানোর সময় দিক নির্নয়ের জন্য মাঝিদের নির্ভর করতে হতো আকাশের তারার ওপর। তাই তাদের জেনে নিতে হতো তারাগুলোর অবস্থান ।
- নৌকার বিভিন্ন অংশঃ
একটি নৌকায় অনেক গুলো অংশ থাকে, যেমন: পাটা, খোল, ছই, দাঁড়, হাল, পাল, মাস্তুল, নোঙর, গলুই, বৈঠা, লগি ও গুণ ইত্যাদি। সাধারণত নৌকা কাঠ দিয়ে বানানো হয়।ছই বা ছাউনি এবং লগি বনানো হয় বাঁশ দিয়ে আর পাল তৈরি হয় শক্ত কাপড় জোড়া দিয়ে। খোলকে জলনিরোধ করার জন্য এতে আলকাতরা লাগানো হয়।
- বিভিন্ন রকমের নৌকাঃ
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের নৌকার প্রচলন রয়েছে। যেমনঃ সাপুরিয়া নৌকা, কেড়াই নৌকা, তোলা নৌকা,ইলশা, ছিপ, বজরা, ময়ূরপঙ্খী, গয়না, পানসি, কোষা, ডিঙ্গি, পাতাম, বাচারি, রপ্তানি, ঘাসি, সাম্পান, ভোট নৌকা, বৌচোরা নৌকা, লক্ষী বিলাস, গন্ডী বিলাস,খেয়া নৌকা, বাইচের নৌকা । এর মধ্যে অধিকাংশই প্রায় বিলুপ্তির পথে। কিছু আবার একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে আর বাকীগুলো এখন জাদুঘরে। একই সাথে কমে যাচ্ছে মাঝি-মাল্লা ও নৌকা তৈরির কারিগরের সংখ্যাও। এগুলোর মধ্যে কিছু নৌকার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদত্ত হলো-
১। সাম্পানঃ ‘সুন্দর সাম্পানে চড়ে মাধবী এসেই বলে যাই’ রফিক আজাদের এই কবিতার লাইনের মতোই এ দেশের লোকগীতি ও সাহিত্যের পরতে পরতে এই সাম্পানের উল্লেখ আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের নৌকার মধ্যে সাম্পান সবচেয়ে পরিচিত। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে ভেসে বেড়ায় সাম্পান। চট্টগ্রাম আর কুতুবদিয়া এলাকায় সাম্পান নৌকা বেশি দেখা যায়। এই নৌকাগুলোর সামনের দিকটা উঁচু আর বাঁকানো, পিছনটা থাকে সোজা। সাম্পান একটি ক্যান্টনিজ শব্দ, যা সাম (তিন) এবং পান (কাঠের টুকরো) থেকে উদ্ভব। আভিধানিক অর্থ ‘তিন টুকরো কাঠ’। একজন মাঝি চালিত নৌকাটি মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হতো। বড় আকারের সাম্পানও দেখা গেছে, যাতে ৭ জন মাঝি আর তিনকোণা আকারের তিনটি করে পাল থাকতো।
২। বজরা নৌকাঃ আগের দিনে বাংলার জমিদার এবং বিত্তশালীদের নৌ-ভ্রমণের শখের বাহন ছিল বজরা। এতে খাবার-দাবার ঘুমানোসহ নানা সুবিধা থাকত। কোনোটাতে পালও লাগানো হতো। এতে ৪ জন করে মাঝি থাকত। এই নৌকা এখন আর দেখাই যায় না আধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতির কারণে।
৩। ময়ূরপঙ্খীঃ প্রাচীন কালে রাজা-বাদশাহদের শৌখিন নৌকার নাম হলো ময়ূরপঙ্খী। এর সামনের দিকটা দেখতে ময়ূরের মতো বলে এর নাম দেয়া হয়েছে ময়ূরপঙ্খী। নৌকাটি চারজন মাঝিকে চালাতে হতো। এই নৌকায় থাকত দুটো করে পাল। ১৯৫০ সালের পর থেকে একেবারেই বিলুপ্ত এটি।
৪। ডিঙ্গি নৌকাঃ সবচেয়ে পরিচিত নৌকা হচ্ছে ডিঙ্গি। যারা নদীর বা হাওড়-বাঁওড়ে তীরে বাস করে, তারা নদী পারাপার, মাছ ধরা ও অন্যান্য কাজে এই নৌকাটি ব্যবহার করে। আকারে ছোট বলে এই নৌকাটি চালাতে একজন মাঝিই যথেষ্ট। মাঝে মাঝে এতেও পাল লাগানো হয়। এখনো গ্রাম-গঞ্জে ডিঙ্গির দেখা মেলে।
৫। ডোঙাঃ গোড়ালীসহ তালগাছ দিয়ে তৈরি ছোট নৌকা বিশেষ। এটি তালের নাও বা কোন্দা নামে পরিচিত। ডোঙ্গা বেশ টেকসই কিন্তু প্রস্ততা এতই কম যে এতে খুব বেশি মানুষ বা মালামাল বহন করা যায় না। একটু বেসামাল হলে ডোঙ্গা উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাল গাছের কোন্দা সহজে পঁচে না বলে ডোঙা বেশ কয়েক বছর ব্যবহার করা যায়।
৬। পালতোলা পানসিঃ নৌ-ভ্রমণে দূরে কোথাও যাওয়ার একমাত্র ও অন্যতম মাধ্যম ছিল পালতোলা পানসি। সম্রাট আকবরের আমলে এ নৌকায় করে জমিদাররা বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য করতে যেতেন। বর্ষায় ভাটি অঞ্চলে নাইওরি বহনে এই নৌকার জনপ্রিয়তা ছিল। এই পানসীতে চড়ে মাঝি মাল্লার ভাটিয়ালি, মুর্শিদী আর মারফতি গান গেয়ে মন কেড়ে নিতো যাত্রীদের। বাংলাদেশের বরিশাল অঞ্চলে এটি প্রচুর দেখা যেতো।
৭। ছুঁইওয়ালা বা একমালাইঃ পালতোলা পানসির মতো ছুঁইওয়ালা একমালাই ছিলো দূরপাল্লার নৌকা। আজও এর দেখা মেলে। বরিশালের দুশুমি গ্রাম ও এর আশপাশের এলাকাসহ উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের সদস্যরা ছুঁইওয়ালা নৌকা চালানোর ঐতিহ্যবাহী পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন।
৮। কোসাঃ বর্ষাকালে চরাঞ্চলে বা বিলে ডোঙা দেখা যায়। অন্যান্য নৌকার মতো এর গলুইয়ের কাঠ বড় থাকে না। অঞ্চল বিশেষে এর আকার ছোট বড় দেখা যায়। কোষা মূলত পারিবারিক নৌকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। হাটবাজার, স্বল্প দূরত্বে চলাচলের কাজে লাগে। একটি আদর্শ কোষা নৌকাতে আটজনের মতো যাত্রী বহন করা যায়। সাধারণত কোষাগুলোতে ছই থাকে না। কোষা বৈঠা দিয়ে চালানো হয়। তবে অগভীর জলে লগি ব্যবহার করে চালানো যায়।
৯। গয়না নৌকাঃ মাঝারি বা বড় আকারের গয়না নৌকা মূলত যাত্রী পারাপারের কাজেই ব্যবহার করা হতো। এর ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি মাচার ছাদ থাকে। একসঙ্গে প্রায় ২৫-৩০ জন যাত্রী বহন করার ক্ষমতা ছিল এই নৌকাটির।
১০। বাতনাই নৌকাঃ দক্ষিণাঞ্চলে মালামাল পরিবহনের ব্যবহৃত নৌকা বাতনাই, যা পদি নামেও পরিচিত। এই নৌকাগুলো চালাতে ১৭-১৮ জন মাঝি লাগত। এতে ১৪০-১৬০ টন মাল বহন করা যেত। এধরনের নৌকা এখন আর বাংলাদেশের কোথাও পাওয়া যায় না।
১১। ঘাষীঃ ভারি এবং বেশি ওজন বহন করার উপযোগী নৌকা হল ‘ঘাসী নৌকা’। এটি মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হতো। তবে এখন আর ঘাষী নৌকা দেখা যায় না।
১২। মলারঃ পাবনা অঞ্চলে একসময় তৈরি হতো মলার নৌকা। এটাও মূলত মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হতো। ১২ থেকে ৫৬ টন ওজনের ভার বহনে সক্ষম মলার নৌকায় পাল থাকে দুটি, দাঁড় ছয়টি। এ ধরনের নৌকাও এখন বিলুপ্তির পথে।
১৩। বালার নৌকাঃ কুষ্টিয়া অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী নৌকা ছিল বালার। এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সেই প্রাচীনকাল থেকে এই নৌকা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই নৌকাগুলো আকারে বড় হয়, যা দৈর্ঘ্যে ১২-১৮ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বৈঠা বায় ১০-১২ জন মাঝি। এ নৌকায় পাল থাকে দুটো।
১৪। সওদাগরী নৌকাঃ ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য সওদাগর গণ এই নৌকা ব্যবহার করে দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতেন। এসব নৌকায় বহু জন বহন করার ক্ষমতা ছিল। এতেও পাল লাগানো হতো। যা এখন বিলুপ্ত।
১৫। বাচারিঃ বাচারি নামের নৌকাটিও বাণিজ্যিক নৌকা ছিল। ৪০ টন ওজনের ভার বহনে সক্ষম বাছারি গত কয়েক দশক আগেই বিলুপ্তির পাতায় চলে গেছে।
১৬। পাতাম: ‘পাতাম’ নামে পরিচিত এই নৌকা দুটি নৌকা একত্র করে তৈরি করা হতো। এটি মূলত মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হতো। নৌকাটিতে একজন মাঝি ছাড়া চারজন দাঁড় টানা লোক থাকত, এবং এতে একটি পাল খাটানোর ব্যবস্থা থাকত। এক সময় সিলেট ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে এই নৌকাটি দেখা যেতো, তবে বর্তমানে এটি প্রায় বিলুপ্তপ্রায়।
১৭। বাইচের নৌকাঃ নৌকা বাংলাদেশে এতটাই জীবন ঘনিষ্ঠ ছিল যে, এই নৌকাকে ঘিরে অনেক মজার মজার খেলা হতো। নৌকাবাইচ এখনো একটি জনপ্রিয় খেলা। বর্ষাকালে সাধারণত এ খেলার আয়োজন করা হয়। বাইচের নৌকা লম্বায় ১৫০-২০০ ফুট পর্যন্ত হয়। প্রতিযোগিতার সময় আকার ভেদে ২৫-১০০ জন পর্যন্ত মাঝি থাকতে পারে। এসব বাইচের নৌকার আবার নাম দেয়া হতো। যেমন: পঙ্খিরাজ, দ্বীপরাজ, সোনার তরী প্রভৃতি। এখনোও মাঝে মাঝে দেখা মেলে।
১৮। শ্যালো নৌকা: বিশ শতকের শেষের দিকে, বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকে, বাংলাদেশের নৌকায় মোটর লাগানো শুরু হয়। এর ফলে নৌকাগুলো যান্ত্রিক নৌ-যানে রূপান্তরিত হতে থাকে। এ ধরনের নৌকাগুলোতে সাধারণত শ্যালো পাম্পের মোটর ব্যবহার করা হয়, যা মূলত পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত হয়।
১৯। বেদের নৌকা : বেদে মানে ভ্রমণশীল বা ভবঘুরে সম্প্রদায় । কথিত আছে ১৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে শরণার্থী আরাকান রাজার সাথে এরা ঢাকায় আসে। সে সময় তারা বিক্রমপুরে বসবাস শুরু করে। তার পর সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ও আসামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। যাদের নৌকাতেই ঘরবাড়ি, নৌকাতেই বসতি। তাই নৌকা এদের অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। বছরের অধিকাংশ সময় বিশেষ করে ফসল তোলার মৌসুমে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এরা বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে পরিভ্রমণ করে। নদীনির্ভর বাংলাদেশে নৌকা বেদেদের বাহন । তারা ছোট সাইজের ছুঁইওয়ালা নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে। সাধারণভাবে এ নৌকাকে বাদিয়া-বাইদ্যা বা বেদের নৌকা নামে পরিচিত।
বর্তমান আধুনিক জগতে মানুষের জীবনে এসেছে যান্ত্রিকতা। এ যান্ত্রিক সভ্যতার ছোঁয়া লেগেছে নৌকাতে। অনেক আধুনিক ইঞ্জিন চালিত নৌকা এখন পাওয়া যায়। আগের মতো এখন আর মাঝিকে কষ্ট করে নৌকা চালাতে হয় না। বাংলাদেশের অসংখ্য নদীতে এখন আর নেই আগের মতো নাব্যতা। অনেক হাওর এবং বিলগুলো বছরের অধিকাংশ সময় এখন থাকে পানি শূন্য অবস্থায়। জলাশয়গুলো বালি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। পাল তোলা নৌকা চলবে কোথায়? তাই এখন শুধুই স্মৃতির জাবরকাটা।
কদর নেই মাঝি-মাল্লাদেরও। নৌকায় পাল এবং দাঁড়-বৈঠার পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের নৌকা। মাঝে মধ্যে দু’একটা পাল তোলা নৌকা এখনো নদ-নদীতে দেখা যায়। যুগের চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ট্রলারেরও আবেদন রয়েছে। তাই বলে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ভুলে গেলে চলবে না। সেই নৌকাগুলোর কদরও যাতে সব সময় থাকে তারও একটা ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।