রাজন হোসেন তৌফিকুল মৌলভীবাজারঃ
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মোহাম্মদনগর গ্রামটির নাম পাল্টে এখন ’ঝিঙে গ্রাম’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে সেই গ্রামটি ।
এই গ্রামটি সপ্তাহের তিনটি হাটবারে কম করে হলেও দেড় লাখ কেজি ঝিঙে বেচাকেনা হয়ে আসছে। এ ঝিঙে চাষে গ্রামের অনেক চাষি আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি নতুন করে বাড়িঘর তৈরি করছে । সেই সঙ্গে ঝিঙে বিক্রির টাকায় তাদের সন্তানদের লেখাপড়া ও দেশের বাইরে পাঠাচ্ছে । গ্রামের লোকজনের অভাব-অনটন দূর হওয়ায় অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন ফিরে আসতেছে ।
সরেজমিন দেখা যায় , উপজেলা মৌলভীবাজারের বড়লেখা মোহাম্মদনগর গ্রামে গেলে , পাহাড়-টিলা আর সমতল বেষ্টিত এ গ্রামটির মাঠজুড়ে শুধু ঝিঙেক্ষেত।
পুরো গ্রামের এক টুকরো মাটিও অবশিষ্ট নেই। বাঁশের কঞ্চি আর গাছের মরা ডালপালা মাটিতে পুঁতে তার মধ্যে ঝিঙে গাছের সারি লাগানো হয়েছে। এসব ডালপালা আঁকড়ে ঝিঙের সবুজ লতাপাতা তরতরিয়ে উপরে উঠেছে। গাছের ফাঁকফোকর দিয়ে ধূসর ও গাঢ় সবুজ রঙের শত শত ঝিঙে ঝুলে আছে। মাচা থেকে ঝিঙে সংগ্রহ করছেন চাষিরা। তারা জানান, মোহাম্মদনগর মূলত একটি কৃষিপ্রধান গ্রাম। এ গ্রামের লোকজন সবসময়ই নানান সবজি চাষাবাদ করে আসছিলেন। কিন্তু উৎপাদনের পর দেখা যায় তাদের তেমন ভালো একটি ফলন হয়নি। এতে প্রতিবছরই লোকসান গুনছিলেন। নব্বই দশকের একটি সময়ে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে প্রথমে এ গ্রামের কয়েকজন চাষি পরীক্ষামূলকভাবে ঝিঙে চাষ শুরু করেন। চাষের শুরুতেই তারা ভালো একটি ফলন পান। তাদের দেখাদেখি অন্য চাষিরা কষির সহায়তা নিয়ে ঝিঙে চাষ করেন।
কয়েক বছরের ব্যবধানে দেখা যায়, ভালো ফলনের পাশাপাশি ঝিঙের চাহিদা থাকায় বিক্রিও মন্দ হচ্ছে না। তা ছাড়া ঝিঙে চাষে পরিশ্রম কম আয় বেশি। এতে আস্তে আস্তে মোহাম্মদনগর গ্রামের চাষিরা ঝিঙে চাষে উদ্বুদ্ধ হন।
বড়লেখা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় চাষিরা বলছেন, এ মোহাম্মদনগর গ্রামের ২০০ বিঘা জমিতে ২০০ থেকে ২৫০ জন চাষি ঝিঙে চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে এসে আলু ওঠানোর পরপরই চাষিরা ঝিঙে চাষে হাত দেন। ঝিঙে রোপণের ৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। টানা তিন থেকে সাড়ে তিন মাস এ ফসল পাওয়া যায়। চলতি বছর অন্য বছরের তুলনায় ঝিঙের বাম্পার ফলনের কথা জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ। প্রতি হেক্টরে ২০ মেট্রিক টন করে ঝিঙে উৎপাদন হয়েছে। বড়লেখা উপজেলা কষি কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, উপজেলায় চলতি বছর ৫৩ হেক্টর জমিতে ঝিঙে চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে, সাড়ে ৮ মেট্রিক টন। গ্রামের চাষি দুধু মিয়া জানান, প্রথম দিকে কম পরিমাণ জমিতে ঝিঙে লাগিয়েছিলেন। বর্তমানে ৪৫ শতক জমিতে ঝিঙে রয়েছে। এ ঝিঙে চাষ করে এক ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছেন। শুধু তাই না, জমিও কিনেছেন।
তার মতো আরও অনেকের অবস্থা ঝিঙে চাষে পাল্টেছে। বড়লেখা উপজেলা সদরে রবি, মঙ্গল ও শুক্রবার এই তিন দিন হাটবার। প্রতি হাটবারের কম করে হলেও এই গ্রাম থেকে দেড় লাখ কেজি ঝিঙে বেচাকেনা হয়ে আসছে। টাকার হিসাবে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার ঝিঙে বিক্রি হয়। চাষিরা জানিয়েছেন, উৎপাদনের শুরুতে এবার এখন পর্যন্ত মোহাম্মদনগর গ্রাম থেকে প্রায় কোটি টাকার ঝিঙে বিক্রি হয়েছে। আরও অন্তত কয়েক কোটি টাকার ঝিঙে বিক্রি হবে। ঝিঙে চাষে গ্রামের চাষিদের এ সফলতায় পাইকার থেকে শুরু করে আশপাশের গ্রামের লোকজন এমনকি বড়লেখা সদরের মানুষের কাছে মোহাম্মদনগর গ্রাম এখন ’ঝিঙে গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
বড়লেখা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন জানান, ঝিঙে চাষ সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ সব ধরনের আর্থিক
সহায়তা দিয়ে আসছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সরকার জানান, জেলায় চলতি বছর ৩৫০ হেক্টর জমিতে ঝিঙে চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার মেট্রিক টন। সামনে দিন গুলো আরো ভালো উৎপাদন হবে বলে আশা করতেছি ।