বেরোবি প্রতিনিধি
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) উপাচার্যের অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। উপাচার্য কথা দিয়ে কথা রাখেন না বলে তাদের অভিযোগ।
আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে আয়োজিত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ এর সাথে কোন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি বেরোবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন, পরিবহনপুল কর্মচারী ইউনিয়ন ও কর্মচারী ইউনিয়ন।
জানা গেছে, মহান বিজয় দিবস ২০২৩ উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এগুলোর মধ্যে সকাল সোয়া ৯টায় বিজয় শোভাযাত্রা, সাড়ে ৯টায় স্বাধীনতা স্মারকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, সকাল ১১টায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা, বেলা সাড়ে ১২টায় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং বিকেলে পুরষ্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এগুলোর কোনটিতেই অংশ নেয়নি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনগুলো।
সকালের শোভাযাত্রা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পনের অনুষ্ঠানের সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনগুলোর নের্তৃবৃন্দকে ক্যাম্পাসের অন্য জায়গায় অবস্থান করতে দেখা গেছে। বরং স্বাধীনতা স্মারকে উপাচার্য কর্মসূচি শেষ করে চলে যাওয়ার পর ওই সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করা হয়। সকাল ১১টায় ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠানেও তারা যোগ দেননি।
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এটিজিএম গোলাম ফিরোজ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে লক্ষ করছি আইন অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা এমনকি কর্মচারীদের জন্য কোন কিছুই করা হয় না। অনুষ্ঠানগুলোতে রেজিষ্ট্রারের জন্যও প্রটোকল অনুযায়ী কোন ব্যবস্থা করে না প্রশাসন। অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাথে উপাচার্য নানা সময় বিভিন্ন আশ্বাস দেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করেন না, এজন্য সিন্ডিকেট সভাতে এর কোন প্রতিফলন দেখতে পাই না আমরা। এর অংশ হিসেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা এই প্রশাসনের সাথে কোন অনুষ্ঠানে যাব না। বিজয় দিবসে প্রশাসন শেষ করার পর আমরা নিজেরা কর্মসূচি পালন করবো। এসব অনুষ্ঠানে অর্থ খরচের বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, এসব অনুষ্ঠানের জন্য যেসকল কমিটি হয় সেগুলোর খরচের বিষয়েও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কিছু জানেন না।
তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বাবু বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে সকলের চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হয় কিন্তু কর্মচারীদের কোন চাওয়া পূরণ হয় না। সর্বশেষ গতকাল ১৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি আপগ্রেডেশন নীতিমালা পাস হওয়ার কথা ছিল কিন্তু উপাচার্য মহোদয় সেটাও করেন নি। এর প্রতিবাদে আমরা সকল কর্মচারী আজকের অনুষ্ঠানে উপাচার্যের সাথে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা তৃতীয় শ্রেণি অ্যাসোসিয়েশন, পরিবহনপুল কর্মচারী ইউনিয়নসহ কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে বিজয় দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ নুর আলম মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক জমশেদ আলম হিরু বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা সব সময় বৈষম্যের শিকার। এখানে সবাই শিক্ষিত মানুষ এর পরেও স্বাধীনতার দিনে আমাদের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। গতকাল ১৫ ডিসেম্বর সিন্ডিকেটে আমাদের নীতিমালা পাস হওয়ার কথা থাকলেও সেটা করা হয়নি। অথচ অন্যান্য সবার সবকিছু পাস করা হয়েছে। এজন্য আমরা আজ বিজয় দিবসে ভিসি স্যারের সকল অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে আবার নিজেরা বসে বাকি সিদ্ধান্ত নিব।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হাসিবুর রশীদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায় নি।
এদিকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য স্বাধীনতা স্মারক চত্ত্বরে মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরি করা হলেও ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করায় সমালোচনা করেছেন অনেকে। এ বিষয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর কমলেশ চন্দ্র রায় পরে যোগাযোগ করতে বলে ফোন কেটে দেন।
মোঃ আকবর আলী রাতুল
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়