ইতিহাসের গর্ভ থেকে উঠে আসা, ভারতের এক রাজকীয় রত্ন আবার বিশ্বজুড়ে আলো ছড়াতে চলেছে। বিরল, উজ্জ্বল ও গভীর নীল রঙের এই হিরে গোলকোন্ডা ব্লু। আগামী ১৪ মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ‘ক্রিস্টি’স’-এর ‘Magnificent Jewels’ নিলামে উঠতে যাচ্ছে। এর সম্ভাব্য মূল্য ধরা হয়েছে ৩৫ থেকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩০০ থেকে ৪৩০ কোটি টাকার সমান।
২৩.২৪ ক্যারাটের এই হীরেটি বর্তমানে প্রখ্যাত গয়নাশিল্পী জার (JAR) ডিজাইন করা এক আধুনিক রিংয়ে বসানো আছে। ‘ক্রিস্টি’স’-এর আন্তর্জাতিক জুয়েলারি বিভাগের প্রধান রাহুল কাদাকিয়া বলেন, “রাজকীয় ঐতিহ্য, অপূর্ব রঙ এবং অসাধারণ মানের জন্য গোলকোন্ডা ব্লু নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যতম দুর্লভ এবং মূল্যবান নীল হিরে।”
গোলকোন্ডার খনি যা দাক্ষিণাত্যের বর্তমান তেলেঙ্গানা রাজ্যের অংশ এটি এক সময় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ হিরে উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। কোহিনূর, হোপ ডায়মন্ড, ড্রেসডেন গ্রিনের মতো কিংবদন্তি হিরেগুলির উৎসও এই অঞ্চল। চতুর্থ শতাব্দীর এক সংস্কৃত পাণ্ডুলিপিতে প্রথম গোলকোন্ডার হিরের উল্লেখ পাওয়া যায়, এবং আলেকজান্ডার বা মার্কো পোলো-র বর্ণনায় এই হিরের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে।
গোলকোন্ডা ব্লু একসময় ইন্দোরের মহারাজা যশবন্ত রাও হোলকর -এর সংগ্রহে ছিল। ১৯২৩ সালে বিখ্যাত ফরাসি গয়নাশিল্পী Chaumet এটিকে একটি ব্রেসলেটে বসান। পরে এটি ‘ইন্দোর পিয়ার্স’ নামে পরিচিত আরেক জোড়া নীল হিরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এক বিশাল নেকলেসে পরিণত হয়। ফরাসি শিল্পী বার্নার্ড বুটে দ্য মনভেল এই নেকলেস পরে থাকা ইন্দোরের মহারানির একটি চিত্র আঁকেন, যা আজও ইউরোপীয় শিল্পরুচি ও ভারতীয় রাজকীয় ঐতিহ্যের অনন্য মেলবন্ধনের নিদর্শন।
ভারতের স্বাধীনতার পর, ১৯৪৭ সালে এই হীরেটি আমেরিকায় চলে যায় এবং খ্যাতনামা জুয়েলারি ব্যবসায়ী হ্যারি উইনস্টন এটিকে একটি ব্রোচে রূপান্তর করেন। পরে এটি বরোদার রাজপরিবারের হাতে আসে এবং সেখান থেকে এক ব্যক্তিগত সংগ্রহে পৌঁছায়।
বিশ্বের সবচেয়ে দামী নীল হিরের তালিকায় রয়েছে: Oppenheimer Blue (১৪.৬২ ক্যারাট) । ২০১৬ সালে $৫৭.৫ মিলিয়নে বিক্রি হয়েছে এবং De Beers Blue (১৫.১০ ক্যারাট) । ২০২২ সালে $৫৭.৪ মিলিয়নে বিক্রি হয়েছে। তবে এই দুই হীরের তুলনায় গোলকোন্ডা ব্লু শুধুমাত্র ওজন বা দামে নয়, বরং ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের দিক থেকেও অনন্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গোলকোন্ডা ব্লু শুধুমাত্র একটি রত্ন নয়, এটি ভারতের রাজকীয় অতীত, ঐতিহ্য এবং বিশ্বের হিরেবাজারে এক ঐতিহাসিক সংযোজন। ১৪ মে অনুষ্ঠিতব্য ক্রিস্টি’স নিলামে এই হীরের বিক্রি নিঃসন্দেহে বিশ্ব হিরে ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।