বিশেষ প্রতিনিধি: যুগ যুগ ধরে গোটা দেশের মানুষ কর্মসংস্থানসহ নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগের মাধ্যমে উন্নত জীবন পার করার আশায় থিতু হতে ছুটছেন রাজধানী শহর ঢাকা অভিমুখে। ফলে ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের ধাক্কা শহরটির এলাকা বর্ধিত করার নিয়ামক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে শহরটির মোহাম্মদপুর এলাকার সীমানাই বুড়িগঙ্গার কোলঘেঁষা ঐতিহ্যবাহী মানচিত্রের গণ্ডি পেরিয়ে এখন পৌঁছে গেছে তুরাগ নদ পর্যন্ত।
এ কারণে, একসময় বহু নদী, খাল আর কৃষিজমির অস্তিত্ব থাকলেও এখন এলাকাটিতে গড়ে উঠেছে পরিকল্পিত-অপরিকল্পিত উভয় ধরনের হাউজিং প্রকল্প, সুউচ্চ ভবন আর ঘিঞ্জি ঘনবসতি। ফলে ঢাকার শহরসীমা যেমন বেড়েছে, তেমনি বিলীন হয়েছে নদ-নদী ও খালের স্বাভাবিক প্রবাহ।
প্লাবনভূমির অবৈধ স্থাপনাকে আংশিক বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বলছে, বুড়িগঙ্গার প্লাবনভূমিতে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ স্থাপনাকে একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় এনে আংশিক বৈধতা দেওয়ার পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তবে সংস্থাটি জানায়, যারা সরকারি জমি, নদী ও খাল দখল করেছেন, তাদের প্রতি থাকবে কঠোর অবস্থান। এ ক্ষেত্রে, ওই সকল অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হবে বলে উল্লেখ করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বসিলার অধিকাংশ খাল বিলীন হয়েছে বেড়িবাঁধে পৌঁছে
মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকার বাসিন্দারা জানান, এক দশক আগেও এখানে ছিল ধানক্ষেত ও খালের প্রবাহ। তবে সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি বদলেছে। নানা আবাসন প্রকল্পের আওতায় গড়ে উঠেছে বহু আবাসিক ভবন।
স্থানীয় বৃদ্ধ জেয়ারত আলী স্মৃতিচারণ করে বলেন, একসময় বান্দা খাল ও মাছপুরা খাল দিয়েই সাতমসজিদ ঘাট পর্যন্ত যাতায়াত করা যেত নৌকায়। এখন সেই খাল ভরাট হয়ে নানা স্থাপনায় গড়ে উঠেছে। ফলে বেড়িবাঁধ এলাকা পর্যন্ত গিয়েই অধিকাংশ খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে।
১৯৮৮ সালের বন্যার পর পাল্টায় চিত্র
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের মাঝে অবস্থিত মোহাম্মদপুর ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক বিশাল অঞ্চল। কিন্তু ১৯৮৮ সালের বন্যার পর শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলে পাল্টে যায় নদীর গতিপথ।
ফলে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাউজিং কোম্পানিগুলো দখল করতে শুরু করে। এর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবরাহ চালু হওয়ায় রাজউকের অনুমোদন ছাড়াও গড়ে উঠতে থাকে নানা ধরনের অবৈধ বসতি।
২০২২ সালে প্রকাশিত ড্যাপ-এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বসিলা এলাকায় স্থাপনা নির্মাণের জন্য পরিবেশগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে নীতিমালার খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, নদী, খাল ও সরকারি জমি দখলকারীদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না।
যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে বৈধ প্রক্রিয়ায় ব্যত্যয়ের মাত্রা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ ন্যূনতম ব্যত্যয় ঘটিয়ে স্থাপনা গড়লে জরিমানা আদায় করে বৈধতা দেওয়া হতে পারে, আবার যারা বড় ধরনের সীমা অতিক্রম করেছে, তাদের স্থাপনা উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নগরায়ণ পরিকল্পনার দুর্বলতা ও নজরদারির অভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধ দখল ও পরিবেশগত ঝুঁকির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হলে এখনই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।