রুশাইদ আহমেদ ও বখতিয়ার নাসিফ আহাম্মেদ: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) পরিসংখ্যান বিভাগের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও পরীক্ষা নিয়ে অনিয়ম করার অভিযোগ ওঠে অতি সম্প্রতি। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগও জানান বিভাগটির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
গত ১৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ দপ্তরের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিকের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
তবে সম্প্রতি এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকদের পক্ষে সাফাই গাইতে দেখা গিয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ও একই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু সালেহ মো. নাহিদ নামের এক শিক্ষার্থীকে। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

পরিসংখ্যান বিভাগের পুরুষ শিক্ষার্থীদের নিজস্ব মেসেঞ্জার গ্রুপে শিক্ষক অতুল চন্দ্র সিংহ ও রশীদুল ইসলামের অসদাচরণ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ করা নিয়ে একটি বার্তায় আবু সালেহ মো. নাহিদ লিখেছেন, “তারপর না মানলে অন্য ব্যবস্থা বলতে বন্ধু? অন্য ব্যবস্থা মানেই কি দুজন স্যারকে আজ এমনভাবে সবার সামনে নিচু করা? কই আগে তো এত কিছু শুনতে পেলাম না। এত কিছু হলে আগেই ব্যবস্থা নিতি তোরা। আজ নাম্বারের জন্য সকলের চরিত্র থেকে ক্যারিয়ার এ আঘাত পড়ে গেলো। নাম্বার তোরা কথা বলেই ম্যানেজ হয়তো করতে পারতি।”
এই প্রসঙ্গে পরিসংখ্যান বিভাগের ১২ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, “জুলাইয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী যে ছাত্রলীগ কর্মী অস্ত্র হাতে ছিলেন, তিনিই এখন বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দিয়ে রশিদুল ইসলাম ও অতুল চন্দ্রের মতো অভিযুক্ত শিক্ষকদের পক্ষ নিচ্ছেন। আমরা আশঙ্কা করছি, আমাদের বন্ধুদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে এবং তাদের ক্ষতির চেষ্টা চলছে।”
তারা আরও জানান, যদি কোনো শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়, তাহলে তার দায় সম্পূর্ণভাবে বিভাগের অভিযুক্ত দুই শিক্ষক রশীদুল ইসলাম ও অতুল চন্দ্র সিংহের উপর বর্তাবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আশিকুর রহমান বলেন, “আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট কিছু শিক্ষক এখনো বিভিন্ন অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এমনকি কিছু শিক্ষক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মার্কস কমিয়ে ফেইল করিয়ে দেখানোর ভয়সহ নম্বর টেম্পারিংয়ের মতো নোংরা কাজ করছেন।এসব ফ্যাসিস্ট শিক্ষকদের রুখে দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এসব ফ্যাসিস্ট শিক্ষকদের পক্ষে কথা বলছে ছাত্রলীগের হামলাকারীরা। এসব শিক্ষকসহ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে যেন ভবিষ্যতে কোনোমফ্যাসিস্ট বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের অপকর্ম চালাতে না পারে। আমরা বিপ্লবীরা প্রস্তুত আছি এসব ফ্যাসিস্টদের রুখে দিতে। প্রয়োজনে আবারো রাজপথে নামবো।”
রংপুর মহানগরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব রহমত আলী বলেন, “পরিসংখ্যান বিভাগের দুইজন শিক্ষকের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ফলাফলের ব্যাপারে অনিয়ম করার যে ঘটনা আমরা জেনেছি তা ন্যাক্কারজনক। যারা একে সমর্থন করে, সাফাই গায় তারাও সমান দোষী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ দায়িত্বশীল সকলের প্রতি শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে সমুন্নত রাখবেন।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র হামলার অভিযোগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর আবু সালেহ মো. নাহিদকে দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়।