বেরোবি প্রতিনিধি
ঋতুর পালাবদলে প্রকৃতিতে শীত এসেছে। সকালের হালকা কুয়াশা, শিশিরভেজা ঘাস, দুপুরের কড়া রোদ সন্ধ্যার পর হালকা ঠান্ডা আর শেষ রাতের হিমেল হাওয়া জানান দেয় শীতের আগমন। মৌসুম পরিবর্তনের ছোয়ায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাস সজ্জিত হয়েছে নতুন রুপে। একেক ঋতুতে একেক রূপে সেজে ওঠে ষড়ঋতুর বাংলাদেশ।
শীতের সকালে কুয়াশার বুক চিরে ক্যম্পাসের কমলা সুন্দরী খ্যাত বাসগুলো শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের ক্যম্পাসে নিয়ে আসে; শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাস। নানা রঙের রঙিন গরম কাপড়ে ক্যম্পাসের চিরচেনা মুখগুলো পরিবর্তন হয়ে যায়। কেউ ছুটছে ক্লাসে কেউ যাচ্ছে খেলার মাঠে।
প্রতিটি ঋতুই নিজস্ব সৌন্দর্যে মহিমান্বিত। তবে বাংলায় শীতের আগমন যে জনমনে এক মাদকতা তৈরী করেছে তা বলাই যায়।
শীতের সকালে খোলা মাঠের উপর শিশিরে শিক্ত ঘাস গুলোর নুয়ে পড়ার দৃশ্য যে কোন শিল্পীর রং-তুলি দিয়ে আকা ছবিকে হার মানাবে নিঃসন্দেহে; সকালে ক্লাসে যাওয়ার আগে এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করা শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছে।
দুপুর পেরিয়ে বিকেল হলে ক্যম্পাসে ঢল নামে নানামুখী মানুষের পদচারনায়।হেমন্তের সাজে সজ্জিত ক্যম্পাসে প্রকৃতির অপরুপ লীলাভূমি দেখতে মানুষের এই কোলাহল।সারাদিনের ক্লাস, প্রেজেনটেশন, এ্যসাইনমেন্ট এর ব্যস্ততা শেষ করে পড়ন্ত বিকেলে স্বাধীনতা স্মারক, ক্যফেটেরিয়া কিংবা শহীদ মিনারের সামনে গোল হয়ে বন্ধুরা একসাথে আড্ডা দিচ্ছে, সেন্ট্রাল মাঠ জমে উঠছে ক্রিকেট খেলায় আর প্রেমিকযুগল হাতে হাত রেখে নতুন দিনের স্বপ্ন বুনতে বুনতে এগুচ্ছে হতাশা চত্বর এর দিকে।
সন্ধ্যা হতেই ক্যম্পাস যেন আরেক নতুন রুপে সেজে ওঠে। হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন পুরো ক্যম্পাস, অনুভূত হচ্ছে শীত, চারিদিকে জ্বলে উঠেছে ল্যমপোস্ট এর আলো আর মাঠগুলোতে একে একে জ্বলে উঠছে ব্যডমিন্টন খেলার বাতি। শীতের রাতে একাডেমিক ভবনগুলোর সামনে পিকনিক এর হিড়িক পরে যায়। শিক্ষার্থীরা কেউ রান্না করছে কেউ আড্ডায় মেতে উঠছে কেউবা সাউন্ড-বক্সে গান বাজিয়ে উল্লাস করছে। এ যেন শীতের উৎসবে মেতে উঠছে সবুজ-শ্যামল নানা প্রজাতির গাছে ভরপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।
বেরোবি শিক্ষার্থী নিয়ামত বলেন, শীতের ক্যম্পাস এক অন্যরকম ভালোলাগা, বন্ধুরা একসাথে আড্ডা দেওয়া, হৈ-হুল্লোড় করা, রাতে ব্যডমিন্টন আর ক্রিকেট খেলা, একসাথে গান করা আমাদের জীবনে নতুন অনূভুতি যোগ করে। তবে ক্যম্পাসে কোন চা-য়ের টঙ বা দোকান না থাকায় আমরা ক্যম্পাসে চায়ের আড্ড দেওয়ার স্বাদ পাই না, একসাথে চা খেতে হলে আমাদের হেঁটে যেতে হয় পার্কের মোড়।
প্রকৃতি, সঙ্গে মানুষের ঠোঁট ফাটার মত অমসৃণ ত্বক, গাছের পাতা ঝরে যাওয়া ও সবার মাঝে পিঠা বানানোর প্রতিদ্বন্দ্বিতাই যেন শীতকালের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য। তবে নিজ গাঁও ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শীতের আমেজ যেন আরো বিচিত্র রকমের। বৃত্তের ন্যয় গোল হয়ে আড্ডা দেওয়ার উপযুক্ত সময় শীতকাল এ জন্য কেউ বেছে নেয় স্বাধীনতা স্মারক কিংবা মাঠ, কেউবা ক্যফেটেরিয়া চত্বর। রাতের গানের আসর জমাতে গিটারের তারের সঙ্গে গলার স্বরধ্বনি ক্যম্পাসের দেওয়াল জুড়ে ছড়িয়ে দেয় এক মনোমুগ্ধকর অনুভূতি।
এক শীতে ক্যম্পাস জীবন শুরু করে, আবার কোন এক শীতে পড়ালেখা শেষ করে ক্যম্পাসের মায়া ছেড়ে ফিরে যেতে হয় পরবর্তী গন্তব্য খুঁজতে। সময়ের পরিক্রমায় প্রতিবছর শীত আসবে, অতিথি পাখি আসবে, কুয়াশা আসবে, রাস্তার মোড়ে পিঠার দোকান বসবে কিন্তু ক্যম্পাসে কাটানো শীতের মুহূর্ত একটা নির্দিষ্ট সময় পর আর পাওয়া যাবে না। এ জীবনকে সবার উপভোগ্য আর স্মৃতিময় করে তোলা উচিৎ।
আকবর আলী রাতুল
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।