ইমরান খান নাহিদ: স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটলেও এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আলমগীর চৌধুরী। সম্প্রতি বিধিবহির্ভূতভাবে স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এককভাবে বেরোবি ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করায় আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি।
জানা যায়, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একে একে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টর, বহিরাঙ্গণের পরিচালকসহ প্রশাসনের অনেকে পদত্যাগ করেন। গত মার্চ থেকে উপ-উপাচার্য পদও শূন্য হয়ে আছে। এমতাবস্থায়, প্রশাসনের নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিদের অনুপস্থিতিতে একক স্বেচ্ছাচারিতায় সিন্ডিকেট সভার অনুমোদন ছাড়াই গত ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সকল রাজনৈতিক সংগঠন সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে একটি অফিস আদেশ জারি করেন রেজিস্ট্রার মো. আলমগীর চৌধুরী।
‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৯’ এর প্রথম সংবিধির ১২ ধারা মোতাবেক, রেজিস্ট্রার হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আবাসিক কর্মকর্তা এবং তিনি সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে উপাচার্য কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু উপাচার্য শূন্য ক্যাম্পাসে সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা না করে রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আলমগীর চৌধুরী কীভাবে নিজ ক্ষমতাবলে ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অফিস আদেশ জারি করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিদের অনুপস্থিতিতে রেজিস্ট্রার এরূপ কাজ করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন অনেক শিক্ষক। শিক্ষার্থীরাও তার বিষয়টিকে ‘প্রতারণা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের সদ্য সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো. মতিউর রহমান বলেন, “আমি রেজিস্ট্রার মহোদয়কে নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিদের অনুপস্থিতিতে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে জবাবে ‘আমি নিষিদ্ধ করেছি, আপনারা আবার চালু করবেন’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।”
এ ছাড়া, একজন রেজিস্ট্রার একক ক্ষমতাবলে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মতিউর বলেন,
“বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কোনো উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টা নেই। ট্রেজারারও অনুপস্থিত। এমতাবস্থায় রেজিস্ট্রারের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। একজন রেজিস্ট্রার শুধু উপাচার্য এবং সিন্ডিকেট প্রদত্ত দ্বায়িত্ব পালন করতে পারেন।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাধারণ শিক্ষার্থী এ বিষয়ে বলেন, “ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের মতো একটি বিষয়ে রেজিস্ট্রার স্যার মূলত এক ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। কেননা, প্রশাসনিক অনুমোদন ছাড়া এত বড় অনুমোদন ধোপে টিকবে না।”
উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ কোনো প্রকার উন্মুক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান না করেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমতি গ্রহণ ব্যতিরেকে কমিশনের প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে নিয়োগ বোর্ড গঠন করে মো. আলমগীর চৌধুরীকে অবৈধভাবে তৃতীয় মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি, চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৮৬ কর্মদিবসের মধ্যে ৫৩ দিনই ছুটি কাটিয়েছেন তিনি। এরপর আবারও ছুটি কাটাতে মাসখানেকের জন্য দেশের বাইরে যান বেরোবি রেজিস্ট্রার।
এর আগে চুক্তির শর্ত ভেঙে গত বছর বিধিবহির্ভূতভাবে প্রায় দেড় লাখ টাকা ঈদ বোনাস নেওয়ায় ইউজিসির ব্যাখ্যা তলবের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ ফেরতও দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া, তাঁর বিরুদ্ধে সদ্য পদত্যাগ করা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করতে প্রশাসনের কিছু বিতর্কিত কর্মকর্তাকে নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার দুর্লঙ্ঘ্য দূর্গ গড়ে তোলার অভিযোগও রয়েছে।
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আলমগীর চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এনএ/আরএ