কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি এবং কোনরকম পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডম্বুর ও গজলডোবা বাঁধ খুলে দেয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। দেশের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ প্রায় নয়টি জেলার অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ভেসে গেছে গবাদিপশুসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।বাংলাদেশের প্রতি ভারতের এমন বিদ্বেষী আচরণের প্রতি প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ব্যানারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা। এরপর মিছিলটি পরিবহন চত্বর সংলগ্ন সড়ক হয়ে চৌরঙ্গী পেরিয়ে কেন্দ্রীয় চিকিৎসা কেন্দ্র সংলগ্ন সড়ক হয়ে বটতলায় এসে শেষ হয়।এসময় ‘বন্যায় যদি মানুষ মরে, সেভেন সিস্টার্স থাকবে নারে, আবরার তোমায় মনে পড়ে বন্যায় যখন মানুষ মরে, পেতে চাইলে মুক্তি ছাড়ো ভারত ভক্তিসহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন তারা।মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।সমাবেশে অতি দ্রুত বাঁধ বন্ধের ব্যবস্থার নিয়ে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা না করা হলে চিকেন নেক বরাবর লং মার্চ কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এসময় সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আনজুম শাহরিয়ার বলেন, ’বাংলাদেশের সাথে ভারতের যে আন্তর্জাতিক নদীগুলো আছে তার পানির ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। ইতিপূর্বে ফ্যাসিবাদী সরকারের সাথে ভারতের যে অন্যায্য ও গোপন চুক্তিগুলো হয়েছিল তা দ্রুত বাতিল করতে হবে এবং বাংলাদেশের সাথে আলোচনা না করে কোনো বাঁধ খুলে দেওয়া যাবে না। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগরে চলমান ভারতীয় প্রকল্প বন্ধ করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ’ভারতের সাথে প্রতিবেশি কোনো রাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক নেই। উগ্র, ফ্যাসিস্ট, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সেখানে শাসন করছে। ভারত সরকার যদি বাংলাদেশের জনগণের বন্ধু না হয়ে শেখ হাসিনাকে বন্ধু হিসেবে বেছে নেয়, তাহলে তাদেরকে বাংলাদেশের জনগণের শত্রু হিসেবে বেছে নিতে হবে। তাদের শোষণের অন্যতম একটি উপায় হলো আমাদের নদীর পানি শোষণ।’
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ভারত-বাংলাদেশের যৌথ ৫৪ টা আন্তর্জাতিক নদীর বেশিরভাগ নদীতেই অবৈধ বাঁধ দিয়ে একদিকে যেমন গ্রীষ্মকালে পানি বন্ধ করে খরার সৃষ্টি করে অন্যদিকে বর্ষাকালে বাধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বন্যার পানিতে প্লাবিত করে । এছাড়াও গত ১৬ বছরে ভারত বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য ও বাজারে পরিণত করেছে । এখনই সময়ে এসেছে ভারতীয় সকল আগ্রাসন রুখে দিতে ।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, ’বারবার ভারতের এমন আগ্রাসন আমরা মেনে নিতে পারি না।ভারত যদি তাদের নীতি থেকে সরে না আসে আমরাও তাদের সেভেন সিস্টার্সকে শান্তিতে থাকতে দিবোনা।
রবিউল/এমএ//