ভারতের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের রহস্যে ঘেরা ৭টি রাজ্য। যাদের একত্রে বলা হয় সেভেন সিস্টার্স। ভারত তো বটেই প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এই সাতটি রাজ্য প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ইস্যুর জন্ম দেয়। সম্প্রতি দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড মুহাম্মদ ইউনুসের একটি মন্তব্যের ফলে আবারও আলোচনায় এই সেভেন সিস্টার্স।
সেভেন সিস্টার্স সম্পর্কে জানতে হলে, ফিরে যেতে হবে সেই ১৯৭২ সালে। সে বছর ত্রিপুরার একজন বিখ্যাত সাংবাদিক, জ্যোতি প্রকাশ সাইকিয়া ভারতের সাতটি প্রদেশ যথা অরুণাচলপ্রদেশ, মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজ়োরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা রাজ্যকে সেভেন সিস্টার্স নাম দেন একটি রেডিও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ‘ল্যান্ড অফ সেভেন সিস্টারস’ নামে এই ৭ টি প্রদেশের ওপর লেখা তার একটি বইও রয়েছে। মূলত এরপরই এই নমটি অর্থাৎ ‘ সেভেন সিস্টার্স ‘ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
একত্রে এই সাত রাজ্যের আয়তন ২,৫৫,৫১১ বর্গকিলোমিটার, ভারতের মোট এলাকার প্রায় ৭ শতাংশ নিয়ে আছে এই সেভেন সিস্টার্স। এই ৭ টি রাজ্যে জাতিগত এবং ধর্মীয় বৈচিত্র্য বিদ্যমান থাকলেও রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের অনেক মিল রয়েছে। ভূরাজনৈতিকভাবে এদের অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বৈচিত্র্যময় সামাজিক কাঠামো তাই সারা বিশ্বে অতুলনীয়।
সেভেন সিস্টার্স এর বেশিরভাগ সদস্যই নানা আদিবাসী জাতি এবং উপজাতি সম্প্রদায়ের। স্থানীয় আদিবাসী রাজারা দীর্ঘদিন এসব অঞ্চল শাসন করেন। ফলে গারো, খাসিয়া, ত্রিপুরা, বোরো, মিজো আদিবাসী অধ্যুষিত রাজ্যগুলোর অধিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে নাগাল্যান্ড, মণিপুর, অরুণাচল, মিজোরাম ও আসাম রাজ্য নিয়ে স্বাধীন ভূমি গড়ার দাবি তুলছে। সম্প্রতি ভারতের স্বাধীনতা দিবসে মণিপুর রাজ্যে কয়েক হাজার লোক নাগা পতাকা উড়িয়ে স্বাধীন ভূমির পক্ষে সমর্থন দিলে বিষয়টি বিশ্বাবাসীর নজরে আসে।
রাজ্য সাতটি চারদিক থেকেই অন্যান্য রাষ্ট্রের স্থলভাগ দিয়ে বেষ্টিত। যাতে করে ভারতের মূল ভূ-খণ্ডের সাথে এদের যোগাযোগ রক্ষা করা হয় মাত্র ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সরু পথ দিয়ে। যাকে বলা হয় চিকেন নেক করিডোর। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিকে অবস্থিত। কিন্তু এ পথ ব্যাবহার করা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। ফলে ভারত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এ সাতটি রাজ্যের সাথে সড়ক, রেল ও নৌপথে ট্রানজিট স্থাপনে বিশেষভাবে আগ্রহী। কিন্তু বিশ্লেষকদের দাবি, এমন ট্রানজিট ভারতের জন্য স্বার্থ হাসিল হলেও আমাদের দেশের অর্থনীতিতে তেমন সুফল আনতে পারবে না।
সম্প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশকে কেউ অস্থিতিশীল করতে চাইলে চারদিকে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিবেশী মিয়ানমার, ভারতের সেভেন সিস্টার্স, পশ্চিমবঙ্গ সব জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়বে অস্থিরতা।’ ভারতের এক সংবাদমাধ্যমে তার এমন আশঙ্কা প্রকাশের পর থেকেই নতুন করে আলোচনায় আসতে শুরু করে এই সেভেন সিস্টার্স।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ কোনো পরাশক্তির রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থে যেন উপলক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে যেন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে দেশটির সরকারকে সচেষ্ট থাকতে হবে। কারন এ বিষয়ে যেকোনো ভুল সিদ্ধান্ত আমাদের অর্থনীতির চরম অবক্ষয়ের কারণ হতে পারে।