বিশ্বকাপ ফাইনালের পর ছয়দিন কেটে গেলেও ওই খেলার ফলাফল নিয়ে বাংলাদেশের একাংশের উচ্ছ্বাস প্রকাশ যেমন বন্ধ হয়নি সামাজিক মাধ্যমে, তা নিয়ে আবার উল্টোদিকে ভারতীয়দের একাংশও পাল্টা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হারে বাংলাদেশ জুড়ে যে উচ্ছ্বাস পালনের হিড়িক দেখা গিয়েছে, তাতে ক্ষিপ্ত ওপার বাংলার মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের এহেন উচ্ছ্বাসকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না ওইদেশের একটা বড় অংশের মানুষ। এবার শুধু ক্ষোভ এবং ক্রোধই নয়, রীতিমতো বাংলাদেশি পণ্য ভারতে, বিশেষ করে বাংলায় বয়কটের ডাক উঠে গিয়েছে।
বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হার নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে উচ্ছ্বাসের প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের শৈল শহর দার্জিলিংয়ের একটি হোটেল সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের হোটেলে বাংলাদেশের পর্যটকদের আর তারা থাকতে দেবেন না।
ওই হোটেলটির মালিক রাম সরকার বলেছেন, বিশ্বকাপে ভারত হারার পরে বাংলাদেশিদের একাংশ যেভাবে আনন্দোৎসব করছেন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, তা দেখে ভারতীয় হিসাবে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। খেলাতে হার-জিত তো থাকেই কিন্তু এ তো জাতি বিদ্বেষের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তারা।সেজন্যই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম। আমাদের এখানে এসে থাকবেন, আবার গালাগালিও দেবেন, দুটো তো একসঙ্গে চলতে পারে না। সব কিছুর একটা সীমা থাকা দরকার। তার দাবি, তার হোটেলে নিয়মিতই বাংলাদেশি পর্যটকরা আসতেন।
তার এই সিদ্ধান্তের আবার বাংলাদেশের অনেক নাগরিক তাকে ট্রল করছেন, ফোন আর মেসেজ করে গালাগালি দিচ্ছেন আর গুগল রিভিউতে গিয়ে তার হোটেলের খারাপ রেটিং দিয়ে আসছেন বলে জানিয়েছেন রাম সরকার।
সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশকে নানা ক্ষেত্রে বয়কট করার ডাক দেওয়া হচ্ছে। কেউ বাংলাদেশিদের ভিসা না দেওয়ার কথা বলছেন, কেউ বলছেন কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশী প্রকাশকদের যেন স্টল দিতে না দেওয়া হয়। কেউ আবার চাইছেন যে স্টল দিলেও তাতে যেন কেউ না যান। এমনই বিভিন্ন রকম পরামর্শ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে।
এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ কোচবিহারের রাসমেলায় বাংলাদেশি পণ্য বয়কটের ডাকও। ২৬ নভেম্বর থেকে কোচবিহারে বিখ্যাত রাস উৎসব শুরু হচ্ছে। ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে মেলা। এই মেলায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলা দেশের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও নেপাল-ভুটান ও বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। প্রচুর টাকার বেচাকেনা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্টলে বিশেষ করে শাড়ির দোকানে প্রচুর ভিড় হয়। একটা বড় অংশের মানুষ চাইছেন যে কোচবিহারে বাংলাদেশের কোন স্টল দিতে দেওয়া না হোক। পাশাপাশি কেউ কেউ বলছেন যদি সরকার স্টল দিতে বাধ্য করে, তাহলে সেই স্টল যেন কেউ না যান, তাহলেই তাদের শিক্ষা হবে। কয়েকজনের পোস্টে চোখে পড়ছে বাংলাদেশী সংস্থার যেসব পণ্য ভারতে পাওয়া যায়, সেগুলো বন্ধ করা হোক।
এই দাবি শুধুমাত্র লোকমুখে চলছে তা নয়, এ নিয়ে সরব হয়েছেন বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরাও। স্থানীয় নেতা-মন্ত্রীরা কেউ এটা নিয়ে সতর্ক, কেউ বিরোধিতা করেছেন, কেউ আবার পক্ষেও রয়েছেন। শুধু রাসমেলা উৎসবই নয় আলিপুরদুয়ারে ডুয়ার্স উৎসবেও একই ধরনের দাবি উঠেছে। বিশেষ করে প্রতি বছর রাসমেলায় বাংলাদেশের একাধিক স্টল থাকে। যাতে ভিড়ও থাকে প্রচুর। যদিও শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে কোচবিহার পুরসভার তরফে এই ধরনের পোস্ট না করার অনুরোধ করা হয়েছে।
তবে এই ধরনের বয়কটের ডাককে সমর্থন করেছেন কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক নিখিল রঞ্জন দে। তাঁর দাবি, বাংলাদেশ ভারতের জন্যই স্বাধীনতা পেয়েছে। সেই ভারতের বিরোধিতা করে যে ধরনের বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি-আচরণ-উল্লাস প্রকাশ করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং খারাপ ইঙ্গিত বহন করে। যারা বয়কট করতে চাইছেন, তারা দেশকে ভালোবেসে এই ধরনের কথা বলেছেন। তিনি মনে করছেন এতে খারাপ কিছু নেই।
এদের কেউ কেউ আবার সামাজিক মাধ্যমে ‘বয়কট বাংলাদেশ’ ডাকও দিচ্ছেন।