”আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না” মব জাস্টিস থেকে অনুৎসাহিত করতে প্রায়ই বাক্যটি ব্যবহৃত হয়। মব জাস্টিস আসলে কি, সেটা কি আমরা জানি? মব (mob) অর্থ উত্তাল জনতা বা উচ্ছৃঙ্খল জনতা। জাস্টিস (justice) অর্থ বিচার বা ন্যায়বিচার। ‘মব জাস্টিস’ অর্থ উত্তাল জনতা বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিচার। আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে জনতার গনপিটুনিতে কেউ মারা গেলে তাকে লিঞ্চিং(lynching) বলে। এর অর্থ বিচার বহির্ভূত হত্যা।
সম্প্রতি দেশে বিপ্লব ঘটে গিয়েছে। শিক্ষার্থী এবং জনতা একত্রিত হয়ে দেশকে সৈরাচারী শাসন থেকে মুক্ত করেছে। তবে সাবেক সরকারের পতনের পর থেকেই বিগত সরকারের সমর্থকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছে সাধারন মানুষ।তাদেরকে গণপিটুনিতে হত্যা করা পাশাপাশি বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, লুটপাট ও আগুন দেয়ার মত ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি এমন রুপ নিয়েছে, মব জাস্টিস যেনো মানুষের মাথায় চড়ে নাচছে।
বিগত এক মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে মব জাস্টিস এর নামে যেসব হত্যাকান্ড হচ্ছে সেগুলো কি আদৌ জাস্টিস? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ। ৩রা সেপ্টেম্বর ফুটফুটে কন্য সন্তানের বাবা হওয়া মাসুদকে ৭ই সেপ্টেম্বর নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আন্দোলন চলাকালে তিনি ছাত্রদের ওপর হামলা করেছিলেন কিন্তু এর আগে ২০১৪ সালে ছাত্রদের একটি দল মাসুদের ওপর হামলা করে তার বাম পায়ের পাতা গোড়ালি থেকে কেটে আলাদা করে দেয়। কেটে দেয়া হয়েছিল হাতের রগও। ৫ দিনের শিশুকে কোলে নিয়ে মাসুদের লাশ নিতে এসেছিলেন তার স্ত্রী।
এরই আদলে আরেকটি ঘটনা ঘটে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৫ জুলাই রাতে উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা কে মারধর করেছেন শিক্ষার্থীরা।১৮ই সেপ্টেম্বর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গণপিটুনির পর বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
একই তারিখের দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামের ৩২ বছর বয়সী এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে নিয়ে দারুণ প্রহসন করে শিক্ষার্থীরা। মারধোরের এক পর্যায়ে তাকে খেতে দেয়া হয়। তারপর আবার তার ওপর চালানো হয় পাশবিক অত্যাচার। অবস্থা বেগতিক দেখলে শিক্ষার্থীরাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়, চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষনা করলে সেই শিক্ষার্থীদের আর দেখা যায়নি ঘটনাস্থলে।
এর শেষ কোথায়? আর কত মানুষ এমন এমন বিচার বহির্ভূত হত্যার স্বীকার হবে ? অন্যায় যাই হোক, বিচার করবে আদালত। আপনি বা আমি কেউই বিচারক নই।