দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। পরিস্থিতি সামাল দিতে টাল-মাটাল অন্তরবর্তীকালীন সরকার। মব জাস্টিসের নামে চলছে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড,অরাজকতা। উদ্বেগের বিষয় হলো সারা দেশে মব জাস্টিসের নামে চলা অরাজকতা দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। মা-বাবা ও ভাই এর মৃত্যু, প্রেমিকার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর স্বর্বহারা তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। একই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদও।
গত ৭ই সেপ্টেম্বর রাতে ঘটে যায় আরেকটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। মাত্র ৫ দিন আগে কন্যা সন্তনের বাবা হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়। অসুস্থ স্ত্রীর জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ কিনতে এসেছিলো নিরীহ মাসুদ। ২০১৪ সালে মাসুদের হাত পায়ের রগ কেটে দেয়া হয়। কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয় একটি পা। এ ঘটনার পরে রাজনীতি থেকেও অবসরে মাসুদ। পঙ্গু মাসুদ প্লাস্টিকের পা লাগিয়ে খুঁড়িয়ে চলেছে গত ১০ বছর।
ধর্মীয় নানা ইস্যুতেও সহিংসতা শুর হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। একটি স্বার্থান্বেষী মহল সারাদেশে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর করে । এরপর মাজার ভাঙ্গায় উদ্যত হয় একটি গোষ্ঠী। সারাদেশে দেড় শতাধিক মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে গত এক মাসে। বায়তুল মোকাররম মসজিদেও ঘটেছে নজিরবিহীন ঘটনা। দেশের জাতীয় মসজিদের সাবেক ও বর্তমান খতিব দুই গ্রুপের সমর্থক মুসল্লীরা মসজিদের অভ্যন্তরেই সংঘর্ষে জড়ায়। নিয়ন্ত্রনহীন মুসল্লী জনতার সংঘর্ষে আহত হয় অর্ধ-শতাধিক।
খাগড়াছড়িতে গণপিটুনি দিয়ে মামুন নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে উচ্ছৃঙ্খল পাহাড়ি সম্প্রদায়। এরপরই উত্তেজনা বাড়তে থাকে পাহড়ে। সংঘাত বেধে যায় বাঙালী ও আদিবাসীদের মধ্যে। এই ছড়িয়ে পড়ে রাঙামাটি ও পার্বত্য চট্টগ্রামেও, নিহত হয় ৪ জন। ইতোমধ্যে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি কিছু পাহাড়ী সন্ত্রাসী মহল হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
যশোরে শাহীন চকলাদারের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে মবের মাধ্যমে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৪ জন নিহত ও ১৫০ জনের উপর অগ্নিদগ্ধ হয় গত ৫ আগস্টে। গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে লুটপাট চালানোর পরে অগ্নিকান্ডে নিহত হয় ১৮৭ জন, আহত অসংখ্য। থানা-পুলিশ সক্রিয় না থাকায় মব সৃষ্টির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতিতে দু:শ্চিন্তায়, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে মানুষ। যত দ্রুত সম্ভব দেশে মব নামক অরাজকতা বন্ধ করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি তাদের। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সংবিধানের দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।