‘ মানুষ মানুষের জন্যে
জীবন জীবনের জন্যেন্যে
একটু সহানুভূতি কি
মানুষ পেতে পারে না; ও বন্ধু ‘
বিখ্যাত সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার সেই কালজয়ী গান ‘মানুষ মানুষের জন্যে’ আজও মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়।আজও মানুষকে ভাবায়। মানুষের চেতনাকে শাণিত করে;জাগিয়ে তুলে।
বর্তমানের ফেনী,নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার বন্যা পরিস্থিতির দিকে তাকালেই লাইনটির মর্মার্থ পাওয়া যায়।শ্রম,অর্থ,সময়,এমনকি পড়নের কাপড়টি দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে যে যার মতো সেই বন্যার্তদের ধারে ধারে।যদি বন্যার্তদের একটু উপকারে আসি এই তাড়না থেকে।
শিল্পীরা গান গেয়ে,শিক্ষার্থীরা খাবারের টাকা দিয়ে,চাকরিজীবীরা একদিনের টাকা দান করে বন্যার্তদের পাশে দাড়াচ্ছে।কেউ কেউ নিজের ফেসবুক টাইমলাইনেতো লিখেই ফেলতেছে আমিতো পানিতে নেই,পাকা বিল্ডিং এর ৬তলায় এসিতে থাকি তাও কেন আমার ঘুম হচ্ছে না। আবার কেউ বলতেছে বাংলাদেশের ১৭কোটি মানুষ যদি তাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে ৪০ লক্ষ মানুষ না খেয়ে মরবেনা,তাদের বিপদ থাকবেনা।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য বাক্স নিয়ে রাস্তায় নেমে গেছে যারা একদিন না খেয়ে থাকলেও কারও কাছে হাত পাতবেনা।আজ কিনা তারাই অন্যকে বাচানোর জন্য রাস্তায় অর্থ সংগ্রহ করতেছে।
গতকাল সারাদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গণত্রান কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
টিএসসি গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি থেকে গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত ১ কোটি ৮ লাখ ২৩ হাজার ৯৪৭ টাকা নগদ সংগ্রহ করা হয়েছে। শেষ ৫ ঘন্টায় সংগ্রহ ৬৭ লাখ টাকা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হলগুলোতে গণত্রাণ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।সেখানে নগদ অর্থের পাশাপাশি জামাকাপড়ও সংগ্রহ করে তারা। বন্যার্তদের পাশে দাড়াতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হল ও জিয়াউর রহমান হল এর শিক্ষার্থীরা তাদের ‘একবেলা খাবার খরচ সমপরিমাণ’ কর্মসূচি পালন করে।
রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ এর শিক্ষার্থীরা গত দুইদিন ধরে রাজশাহীর বিভিন্ন মোড়,বাজার ও পর্যটক কেন্দ্র থেকে বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহে নেমে পড়ে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রীন ভয়েসের(পরিবেশবাদী সংগঠন) সভাপতি অন্তর বলেন,গ্রীন ভয়েস-এর পরশ টিম কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে পালপাড়া, নোয়াপাড়া, ত্রিশকোর্ট, পোটকড়া, কাদর, তুলাতলি গ্রামে বন্যার্তদের মাঝে সামান্য কিছু জরুরী সহায়তা সরবরাহ করেছে। জরুরি সহায়তার তালিকায় ছিল- চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, খেজুর, স্যানিটারি ন্যাপকিন, পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন, মোমবাতি, লাইটার, প্যারাসিটমল ট্যাবলেট।
গ্রীন ভয়েস-এর ১৬ টি উপটিম নিয়ে দেশজুড়ে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের যেকোন দুর্যোগে (প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট) দ্রুত সাড়া প্রদানকারী উপটিম পরশ।
গ্রীন ভয়েস পরিবার বন্যায় মৃত্যু বরণকারীদের জন্য গভীরভাবে শোকাহত। ১৩ টি জেলার প্রায় ৪৫ লাখ পানি বন্দী মানুষের জন্য প্রার্থনা এবং অগণিত স্বেচ্ছাসেবক যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই দুর্যোগে ঝাপিয়ে পড়ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এর শিক্ষার্থী রাহাত আল খালেদ বলেন, গতকাল আমাদের টিম ত্রাণ ও শুকনো খাবার নিয়ে কুমিল্লা বুড়িচং যায়।সেখানে গিয়ে দেখি পানি আমার কোমর বরাবর। অনেকের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।তাদের একটাই আকুতি তাদের নিরাপদে উদ্ধার করা,একটা নিরাপদ জায়গায় স্থান দেওয়া।তাদের হাহাকার ও আর্তচিৎকার আমার হৃদয় কাপিয়েছে।তাদের সাহায্যের জন্য আমরা আজ আবার তাদের কাছে যাবো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিক ক্লাবের সদস্যরা গতকাল পদ্মা গার্ডেন ও সিন এন্ড বি তে গান গেয়ে বন্যার্তদের জন্য গণত্রাণ কর্মসূচি পালন করেন।
মিউজিক ক্লাবের সভাপতি রিপন প্রামাণিক এর তথ্যমতে গতকাল তারা গান গেয়ে ৫৬ হাজার ৬০৯টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছে।আজও তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
শুধুই যে মুসলমান বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে তা নয়।অনলাইন এ চোখ বুলালেই দেখা যায় হিন্দু,বৌদ্ধ, খৃষ্টান ধর্মালম্বীরাও মানবতার টানে এগিয়ে এসেছে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে।
শ্রেণি বিভাজন ভুলে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে একে অপরের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নেত্রকোণার কালী মন্দির কর্তৃপক্ষ। জন্মাষ্টমীর ব্যয় কমিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা। বিশিষ্ট ইসলামী বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহর আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন তারা।
মন্দিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের এই বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে থাকার জন্য আমাদের গ্রামের (গ্রাম: গড়মা, থানা: বারহাট্টা, জেলা: নেত্রকোণা) ‘কালী মন্দির’ তহবিল থেকে এটি একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস।
যে যেখানেই আছে,যেই পরিস্থিতিতেই আছে সবারই একজায়গায় চোখ আটকে আছে,হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা সেই একদিকেই।তারা কেমন আছে,আবার কেউ পানিতে ডুবে মারা গেলো নাতো।আবার কারও বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেলোনা তো।তাদের হাহাকার, আর্তচিৎকারে সমগ্র বাংলাদেশ এক জয়ে গেছে।সবার একটাই চাওয়া সৃষ্টিকর্তা যেন তাদের ভালো রাখে।তাদের রক্ষা করে। এই পরিস্থিতি দেখে বুঝায় যাচ্ছেনা বন্যার্ত কারা! সমগ্র বাংলাদেশের মানুষই এখন বন্যার্ত। এভাবে হাতে হাত;কাধে কাধ রেখে গড়ে উঠবে আমার সোনার বাংলাদেশ।
দীন/এমএ//