রাবি প্রতিনিধিঃ
মা শব্দটি অনেক ছোট। লিখতে সময়ও কম লাগে, জায়গা দখলও করে কম। তবে এই ‘মা’ শব্দের ব্যাপকতা যে কত বিশাল তা বর্ণনা করা সম্ভব না। মা একটি প্রশস্ত স্থান সেখানে আমাদের আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসা, রাগ, বেদনা, আক্ষেপ সব কিছুকে মেলে ধরতে পারি। মা না থাকলে আমরা এই পৃথিবীতে আসতে পারতাম না।
আমরা যদি একটু খেয়াল করি যে, আমরা প্রতিদিনই কিন্তু নিজেদের প্রমান করার কাজে ব্যস্ত থাকি। আমরা যদি কাউকে বলি আমার মন খারাপ, তবে সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আমাদের প্রমাণ করতে হয়। বন্ধুকে যদি বলি আমার মন খারাপ তাহলে বন্ধু খুব দ্রুতই উত্তর দেয়, “প্লিজ, ভঙ ধরিস না।” তবে তারপর যদি আমার কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে তাকে বুঝাতে পারি যে আসলেই আমার মন খারাপ, তখন সে বুঝতে পারে। অর্থাৎ আমাদের পরিক্ষা দিয়ে প্রমান করতে হয়। কিন্তু মা এমন মানুষ, যার কাছে আমাদের প্রমান না করলেও চলে, বরং আমরা আমাদের মনের কষ্ট, দুঃখ আড়ালে রেখে তার সামনে হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করলেও সে ধরে ফেলে যে তার সন্তানের মন খারাপ।
এমন ঘটনাও তো ঘটে যে, মা কল দিয়ে সকালে খেয়েছি কি না শুনেছে, উত্তরে মাকে বলেছি খেয়েছি। আসলে খাইনি। মা যাতে চিন্তা না করে সেজন্য মিথ্যা বলেছি। কিন্তু কি ঘটে শেষ পর্যন্ত। দেখা যায় মা আমার কথা শুনে বুঝে ফেলেছে যে আমি খাই নাই। এমন ঘটনা আমার সাথে অনেকবার ঘটেছে, যারা বাড়ির বাইরে থাকেন তাদের সাথে এমনই ঘটে। ম্যাজিকে সকলে বিশ্বাস করেন না। তবে একটা বিষয়ে সকলকেই বিশ্বাস করতে হবে। বিষয়টি হলো পৃথিবীর সকল ‘মা’ হলেন তাদের সন্তানের কাছে এক একজন ম্যাজিশিয়ান। মা নিষেধ করেছে এমন কাজ আমি প্রচুর করেছি। তবে কখনোই সে কাজে আমি ভালো ফল পাই নি। বরং মায়ের নিষেধ করা কাজ করে কয়েকবার ছোটোখাটো বিপদের সম্মুখীন হয়েছি। কোনো সমস্যায় পড়ে যখন মাকে বলি,তখন মা বলেন, “আচ্ছা। এটা নিয়ে ভাবিস না। আমি দেখতেছি।” এই কথাটির মধ্যে যে কি এক স্বস্তি কাজ করে তা বলে বুঝানো সম্ভব না।
আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটি ছোট ঘটনার কথা বলি। আমি সবসময় ছোট থেকে মা-বাবার কাছেই থেকেছি।
তাই আসলে মা ছাড়া থাকা সে কতটা কষ্টের হতে পারে সেটা বুঝতে পারি নি। প্রথম যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হয়। তখন নিজে ইচ্ছা করেই মায়ের সাথে কম কথা বলতাম (ফোন কলে)। কারণ একটু বেশি সময় কথা বললেই বাড়ি চলে যেতে মন চাইতো। অর্থাৎ তখন মাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এটা কী কোনো ভাবে সম্ভব? নানা ঘটনা মাকে ভীষণ করে মনে পড়িয়ে দিত। একদিন কিছু কাপড় ধুয়ে রোদে শুকাতে দিয়ে ক্লাসে যাই। এসে দেখি বৃষ্টি হয়েছে এবং কাপড়গুলা সব ভিজে আছে। বৃষ্টিটা শুরু হয়েছিল আমি আসার অল্প আগেই। মানে কাপড় শুকিয়ে গিয়েছিল, বৃষ্টিতে আবার ভিজেছে। কাপড় উঠাতে যেয়ে আমার মনে হলো আমার মা থাকলে এই কাপড় কি ভিজতে দিত! সাথে সাথে মনটা খারাপ হয়ে গেল। তারপরও মাকে প্রথমে কিছু জানাই নি। কিন্তু মন খারাপ কিছুতেই যাচ্ছিলো না। তারপর সন্ধ্যায় মাকে কল করে বললাম এমন হয়েছে।
মা বললো শিখতে হবে তোর। পরিবেশের সাথে মানিয়ে একা বাঁচতেও শিখতে হবে। আমি কী আর সারা জীবন বাঁচবো আর সারা জীবন তোর কাছে থাকতে পারবো? কথাটা শুনে আমার মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল। আমি আবার আমার আবেগ, ভালোবাসা খুব কমই প্রকাশ করতে পারি। সেদিন মাকে কিছুই বলতে পারি নি। মা ছাড়া আমি কতটা অসহায় তা আমি প্রতিটা মুহূর্তে টের পাই। আমার ‘মা’ই একমাত্র মানুষ, যার সাথে আমার সবচেয়ে বেশি ঝগড়া হয়, যার উপর আমি সবচেয়ে বেশি রাগ করি, আর যাকে আমি সবথেকে বেশি ভালোবাসি।
‘মা’, তুমি আমার প্রথম শিক্ষক, তোমার ভালোবাসা নিঃস্বার্থ, তুমি আমার বন্ধু, তুমি আমার পরামর্শদাতা, তুমি আমার আশ্রয়স্থল, আমি তো তোমারই অংশ। আজ মা দিবসে পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা রইলো।
যে ‘মা’য়েরা পৃথিবীতে নেই, তারাও ভালো থাকুন। আপনার সন্তানের প্রার্থনায়, প্রতিটা পদক্ষেপে আপনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন। শেষে, পৃথিবীর প্রতিটা সন্তানের পক্ষ থেকে প্রতিটা মাকে বললাম, “মা, আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
সাকিব মল্লিক, শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়