মুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ র্যালি ও সংহতি সমাবেশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষকদের একাংশ। ‘দেশব্যাপী ছাত্র হত্যা, নিপীড়ন ও হয়রানির ঘটনায়’ ও সরকার ঘোষিত রাষ্ট্রীয় শোক প্রকাশের ঘটনাকে প্রত্যাখ্যান করে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরের সামনে থেকে প্রতিবাদ র্যালি বের করেন শিক্ষকরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সালেহ হাসান নকীব বলেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে সরকার একটি ভীতিকর পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকার সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর এখনও হয়রানি ও নির্যাতন চলছে এবং ডিবি কার্যালয়ে বসিয়ে বিবৃতি দিতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত অশোভন। তিনি এর অবসান চান এবং যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। পাশাপাশি, দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমজাদ হোসেন বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের রক্তে রঞ্জিত। সারাদেশে শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর ঘটনা সবাই দেখেছে। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড শুধু শিক্ষকদের নয়, সারা বিশ্বের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। তাই আমরা সরকার ঘোষিত শোক প্রত্যাখ্যান করে লাল কাপড় মুখে বেঁধে প্রতিবাদ করছি। আশা করি, সরকার জনগণের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে সরকার দ্রুত সারাদেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে তাদের দাবি মেনে নেবে।”
অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, “শিক্ষার্থীরা কিছু যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল। আমরা দেখেছি, প্রথমে সরকার ছাত্রলীগকে কাজে লাগিয়েছে এবং পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের দমনে ব্যবহার করেছে। ক্রমাগতভাবে শিক্ষার্থীদের রাজপথে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শিক্ষক, অভিভাবক এবং একজন পিতা হিসেবে এই শোক আমাদের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। তাই আমরা আজ বিবেকের তাড়নায় রাস্তায় নেমেছি।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, তোমরা আমাদের অহংকার। এই প্রজন্মের মধ্যে জীবন বিলিয়ে দেওয়ার যে অদম্য সাহস লুকিয়ে ছিল আজ আন্দলোন না হলে তা বুঝতাম না। আমাদের শিক্ষার্থীরা এখনো মরেনি, তারা জেগে আছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আছে। তোমরা সালাম, বরকত, নূর হোসেনের উত্তরসূরী।
আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইফতেখারুল আলম মাসউদের সঞ্চালনায় এসময় প্রাণ রসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাসুদুল হাসান খান মুক্তা, আইন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রহিম সাগর,ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষক একাত্মতা পোষণ করে এ সংহতি সমাবেশে অংশ নেন।
দীন ইসলাম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়