রাজন হোসেন তৌফিকুল, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের রাজনগর চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফসল ঘরে তুলবেন, বলেই এমনটাই স্বপ্ন বুনেছেন কৃষকরা।
( ২২ এপ্রিল) মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায় , রাজনগর উপজেলার ফতেপুর, উত্তরভাগ, মুন্সিবাজার, পাঁচগাও, রাজনগর, মনসুরনগর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠে এবার বোরো ধান কাটার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন স্হানীয় কৃষকরা।
রাজনগর উপজেলার কাউয়া দীঘি হাওরাঞ্চল ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষি কাজে যান্ত্রিকী করণের কারণে গত বছর থেকে হাওরাঞ্চলে শ্রমিক সঙ্কট কমেছে। কাউয়াদীঘি হাওরের বেশিরভাগ কৃষকরা কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে তাদের জমির ধান দ্রুত গতিতে কেটে ফেলতেছেন। প্রান্তিক চাষিরা বছরের খোরাকির জন্য ধান সংরক্ষণ করা শুরু করেছেন। কৃষকের বাকি ধান হাওরের জমি ও বাড়ির আঙ্গিনা থেকেই ফোরিয়া ও দালালরা নগদ ও বাকি দরে ধান কিনে নিচ্ছেন।
স্হানীয় কৃষকরা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, চৈত্র মাসের অতি খরা, ধানখেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ, রোগ কিছুটা শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এখন আবার কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কার ফলে বোরো ধানের ফলন ঘরে তোলা নিয়ে কৃষক-কৃষানীরা দুশ্চিন্তায় মাঝে সময় পার করছেন।
রাজনগর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে কাউয়াদীঘি হাওরে ১৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এবছর উন্নত জাতের ধান চাষ বেশি করেছেন কৃষকরা । উচ্চ ফলনশীল ধানের মধ্যে হাইব্রিড, হিরা, ১, ২, ৩, এসইএলএইট, উপসী জাতের মধ্যে বি-৮৯, ৯২, বিধান ৮৮ ধানসহ স্থানীয় জাত ও দেশীয় জাতের ধান চাষ বেশ করা হয়েছে। স্থানীয় জাতের মধ্যে আটাশ, উন্নত্রিশ, বঙ্গবন্ধু, দেশীয় জাতের মধ্যে রয়েছে ইরি, সাইল, নাজির সাইল, লাখাই, চিনিগুড়া, বিরুইন। অনুকল আবহাওয়া ও কৃষকদের পরিচর্যার কারণে নির্ধারিত সময়ে জমির ধান পাকতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে এবার প্রায় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টন ধান উৎপাদিত হবে বলে আশা করা যার । ইতোমধ্যে মাঠ থেকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আশা করা হচ্ছে আগামী ১৪ থেকে ২৩ দিনের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা শেষ হবে।
রাজনগর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের মো. আনছার মিয়া বলেন , চলতি মৌসুমে তিনি পঁচিশ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। অনুকল আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের সার্বিক পরামর্শে তার জমিতে এবার অনেক ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু তিনি ধান কাটার মেশিন কম্বাইন হারভেস্টার দেওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ। একই ব্যক্তিকে একাধিক ধান কাটার মেশিন দেওয়া নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের উপর তার এই ক্ষোভ।
উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের শাহাপুর গ্রামের কৃষক আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেন, ধান আবাদে সময় সেচের কিছুটা সমস্যা মাঝে পরছিলাম । তবে ফলন বাম্পার হয়েছে। আমার জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে । আশা করছি ঝড়-বৃষ্টি না হলে আগামী আট থেকে দশ দিনের মধ্যে সব ধান ঘরে তুলতে পারবো। শুনেছি বাজারে ধানের দাম ভালো। আশা করছি এবার লাভবান হবে।