কোনা জাকজমক নেই, নেই কোনও হাঁকডাক। সুসজ্জিত চেয়ার টেবিল না থাকার পরও এই হোটেলে দু’বেলা এসে খেয়ে যান অসংখ্য মানুষ। হোটেলটিতে নেই কোনও ক্যাশ কাউন্টার কারণ এখানে খেতে টাকা লাগে না। খাবার বিনামূল্যের ঠিকই, তবে একেবারে ফ্রি নয়। খাবারের বিনিময় মূল্য হিসেবে করতে হবে একটি ভালো কাজ।
ফুটপাতের গায়ে টকটকে লাল হরফে বড় করে লেখা হোটেলের নাম, ‘ভাল কাজের হোটেল’। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চলে তাদের এই ভালো কাজের হোটেল যেখানে প্রতিদিন খাবার খায় কয়েকশ মানুষ।
রোজ বেলা দেড়টা বাজতেই ভ্যানে করে খাবার নিয়ে সেই ‘হোটেলে’ পৌঁছন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক। তাঁদের কাছে এসে ভ্যান থেকে খাবারের প্যাকেট তুলে নিয়ে বিলি করতে শুরু করে তরুণ তুর্কীর দল। খাবার তুলে দেওয়ার আগে অতিথিদের দু’টি প্রশ্ন করা হয়– ‘আপনার নাম?’ এবং ‘আজ আপনি কী ভাল কাজ করেছেন?’
কেউ হয়তো জানান, অন্ধজনকে রাস্তা পারাপারে সাহায্য করার কথা। কেউ আবার কোনও এক নিঃস্ব মানুষকে বিনা পয়সায় গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন রিক্সায়। আগত অতিথিদের বেশভূষায় খানিকটা পরিচয় পাওয়া যায় তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থারও। কেউ রেলস্টেশনের কুলি, কেউ রিক্সাচালক, কেউ এমনিই অসহায় পথচারী, কেউ বা ভবঘুরে। কিন্তু কিছু না কিছু ‘ভাল কাজ’ সকলেই করেছেন।
ঢাকার একদল তরুণ সাধারণ মানুষকে ‘ভাল কাজে’ উৎসাহ দিতে খুলে বসেছেন এই ব্যতিক্রমী হোটেলটি। শহরের অসহায় মানুষদের খাওয়ান, অন্তত একটি ভাল কাজের বিনিময়ে। তবে কোনো ভালো কাজ না করলেও আপনাকে অভুক্ত ফিরতে হবে না। আগামী দিন দুইটি ভালো কাজ করার শর্তে আপনি খাবার পাবেন।
বিনামূল্যে হলে তবে এই কর্মকাণ্ডের খরচ চলে কীভাবে? জানা যায় ‘ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ’ গ্রুপ থেকে, ‘ডেইলি টেন মেম্বার’ নিয়মের মাধ্যমে এই কাজ চালান তাঁরা। সদস্যরা রোজ সংগঠনের তহবিলে ১০ টাকা করে জমা দেন।