রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের(রাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক এম তৌফিকুর রহমান বলেছেন, ❝রাজনাথ সিং মধ্যপ্রাচ্য, রাশিয়া ও ইউক্রেন ইস্যু টেনে বাংলাদেশকে উদ্দেশ্য করে তার সশস্ত্র বাহিনীকে সতর্ক থাকার আহবান জানান। এই আহবান অত্যন্ত জঘন্য, নিন্দনীয় ও আন্তর্জাতিক আইন খেলাপি আচরণ। বাংলাদেশের স্বাধীন সার্বভৌমত্বকে তিনি অবজ্ঞা করেছেন। রাজনাথ সিংকে বলতে চাই আপনি আপনার অসংলগ্ন বক্তব্য বন্ধ করুন। বাংলাদেশ মানে ১৮কোটি জনগণ। তানাহলে ১৮কোটি জনগণের ৩৬ কোটি হাত আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে। ❞
আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি। ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক স্বর্ণা দাশ ও শ্রী জয়ন্তকে নির্মমভাবে খুন ও ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং কর্তৃক বাংলাদেশকে জঘন্য ও বেআইনী হুমকি প্রদানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, রাজনাথ সিং আপনি সতর্ক হোন, সাবধান হয়ে নিজের চরকায় তেল দেন। নিজের অস্তিত্বকে সামলান, অন্যকে সতর্ক করতে যাবেন না। আপনারা বন্ধু প্রতিবেশি চান নাকি বৈরী প্রতিবেশি চান তা আপনারাই ঠিক করুন। যদি বন্ধু রাষ্ট্র চান তাহলে সে অনুযায়ী আচরণ করেন। দিন দিন ভারত একটি ঘৃণিত রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে। আমরা বলতে চাই, আজই এই ছিনিমিনি বন্ধ করুন।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, স্বর্ণা হত্যায় আমদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য শেখ হাসিনা সরকার থেকে কিছুটা প্রতিক্রিয়ামূলক হলেও তা তীব্র নয়। তার উচিৎ ছিলো ভারতকে হুমকি দেওয়া যে আর যদি একটা বুলেট চলে তাহলে তার বিপরীতে ভারতকে ১০টা বুলেট উপহার দেওয়া হবে।
মানববন্ধনে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ২৪ এ এসে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের ছাত্ররা নিজেদের বুকের রক্ত দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। আজকে আমরা দেখছি আমাদের বর্ডারে নিরীহ মানুষের কিলিং হচ্ছে। আজকে আমাদের দেশ আর সেই পর্যায়ে নেই যে আমরা ভারতের অবিচার মুখ বুজে সহ্য করব। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের এই হত্যার বিরুদ্ধে যে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে আমি মনে করি এটা যথেষ্ট নয় এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আরও তীব্রভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো উচিত। বাংলাদেশের যে পররাষ্ট্রনীতির বন্ধুত্ব সেটা দেশ টু দেশের সাথে, ব্যক্তি টু ব্যক্তির সাথে নয়। বন্ধুত্ব হওয়া উচিত জনগণের সাথে জনগণের, কিন্তু নির্বিচারে বাংলাদেশের জনগণকে হত্যা করা বন্ধুত্বের কোনো লক্ষণ নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি করোনাকালীন আমরা যখন টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনি তখন তারা সেই ভ্যাকসিন আটকে দেয়। উজানে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে বৃষ্টির সময় আমাদের বন্যার পানিতে ভাসিয়ে দেয়। আবার শুষ্ক মৌসুমে আমাদের পানি না দিয়ে মরুভূমি করে দেয়।এটা কোন ভাল বন্ধু নমুনা নয়। আপনারা এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কা হারিয়েছেন, নেপাল হারিয়েছেন,
মালদ্বীপ হারিয়েছেন। এখন যদি আপনারা বাংলাদেশের সাথেও শত্রুতা করেন। তাহলে কিন্তু আপনারা পৃথিবীর বুকে বেশিদিন টিকে থাকতে পারবেন না। এই বাংলাদেশ এখন আর ফ্যাসিবাদী সরকারের শাসনাধীন নয়,এই বাংলাদেশ পূর্বের বাংলাদেশ নয়। এটি নতুন বাংলাদেশ এবং এদেশে জনগণ জানে কিভাবে বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হয়। তাই আমি ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ করব। আপনারা বর্ডারে কিলিং বন্ধ করুন। তা নাহলে এর পরিণাম ভালো হবে না।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখেছি যে, গতকাল ৯সেপ্টেম্বর জয়ন্ত কে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং এরই এক সপ্তাহ আগে স্বর্ণা দাশকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এভাবে প্রতিনিয়ত ভারতের বিএসএফ বাংলাদেশি নাগরিকদের উপর নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে আসছে। বিশ্ব মানবাধিকার রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মানুষ কে হত্যা করেছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে একটি দেশের সাথে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
আমাদের দাবি ভারতের সীমান্ত বাহিনী যেন আর কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের দিকে বন্দুক তাক না করতে পারে এবং বিগত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এর বিতর্কমূলক বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
মানববন্ধন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
উল্লেখ্য গতকাল সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ভারতীয় সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল বাম সংগঠনের সদস্যরা।